Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব Info

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব Description

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব। আরবী তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ হচ্ছে ঘুম থেকে উঠে সালাতে দণ্ডায়মান ব্যক্তি; তাহাজ্জুদ নামাজ একটি বিশেষ ফজিলত পূর্ণ সালাত যা মুমিনের ঈমানকে আরো দৃঢ় করে দেয়।

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব

১. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সালাতের জন্য খুব পরিশ্রম করতেন

এমনকি তার কদম মোবারক ফেটে যেত; তিনি রাতের কিয়ামে প্রচুর কষ্ট করতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এত কিয়াম করতেন যে, তার দুই পা ফেটে যেত; আয়েশা তাকে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল সাঃ আপনি কেন এরূপ করেন, অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন? তিনি বললেন: আমি কি আল্লাহর শোকর গুজার বান্দা হতে পছন্দ করব না!

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮২০

মুগিরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়াম করলেন, ফলে তার দুই পা ফুলে গিয়েছিল, তাকে বলা হলাে: আপনার পূর্বাপর সব গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন? তিনি বললেন: আমি কি শোকর গুজার বান্দা হবাে না।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮১৯

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জনৈক সাহাবী খুব সুন্দর বলেছেন:

আমাদের মাঝে আল্লাহর রাসূল রয়েছেন, যিনি তার কিতাব তিলাওয়াত করনে যখন উজ্জ্বল ফজর উদিত হয়। তিনি বিছানা থেকে পার্শ্বদেশ পৃথক রেখে রাত যাপন করেন, যখন কাফেররা গভীর ঘুমে নিমজ্জিত থাকে।

২. জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম উপায় রাতের সালাত

আব্দুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করেন, তখন লোকেরা তার দিকে ছুটে গেল। আর চারদিকে ধ্বনিত হল: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করেছেন তিনবার। আমি মানুষের সাথে তাকে দেখতে গেলাম। আমি যখন তার চেহারা ভালোভাবে দেখলাম, পরিষ্কার বুঝলাম তার চেহারা কোন মিথ্যাবাদীর চেহারা নয়। আমি সর্বপ্রথম তাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন:

হে লোকেরা, তোমরা সালামের প্রসার কর, খাদ্য দান কর, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখ ও রাতে সালাত আদায় কর যখন মানুষেরা ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩২৫১, ১৩৩৪; তিরমিযী, হাদীস নং ২৪৮৫, ১৯৮৪

৩. রাতে সালাত আদায়কারীদের জন্য জান্নাতের উঁচু প্রাসাদসমূহ তৈরি করা হয়েছে

আবু মালেক আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

নিশ্চয় জান্নাতে কতক বালাখানা রয়েছে, যার বাহির ভেতর থেকে ও ভেতর বাহির থেকে দেখা যাবে। যা আল্লাহ তৈরি করেছেন তাদের জন্য যারা খাদ্য দান করে, বিনয়াবনত কথা বলে, সিয়ামের পর সিয়াম পালন করে, সালামের প্রসার করে এবং রাতে সালাত আদায় করে যখন লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে।

আহমদ: (৫/৩৪৩); ইবন হিব্বান হাদীস নং ৬৪১; তিরমিযী হাদীস নং ২৫২৭

৪. রাতে নিয়মিত সালাত আদায়কারী গণ আল্লাহর মুহসিন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত, যারা আল্লাহর রহমত ও জান্নাতের হকদার

আল্লাহ তাআলা বলেন, রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটাত আর রাতের শেষ প্রহরে এরা ক্ষমা চাওয়ায় রত থাকত।

সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ১৭-১৮

৫. আল্লাহ তাআলা নেককার ও রহমানের বান্দাদের প্রশংসার মধ্যে রাতে সালাত আদায়কারীদেরও প্রশংসা করেছেন

তিনি বলেছেন: আর যারা তাদের রবের জন্য সিজদারত ও দন্ডায়মান হয়ে রাত্রি যাপন করে।

সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৪

৬. আল্লাহ তাআলা সাক্ষ্য দিয়েছেন রাতে সালাত আদায়কারী গণ পূর্ণ ইমানদার

তিনি বলেছেন: আমার আয়াতসমূহ কেবল তারাই বিশ্বাস করে, যারা এর দ্বারা তাদেরকে উপদেশ দেওয়া হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ করে। আর তারা অহংকার করে না। তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমরা তাদেরকে যে রিযিক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।

সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১৫-১৬

৭. যারা রাতে সালাত আদায় করে ও যারা করে না তারা উভয় সমান নয়

আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রবের রহমত প্রত্যাশা করে সে কি তার সমান যে এরূপ করে না বল, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান? বিবেকবান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।

সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৯

৮. রাতের সালাত গুনাহের কাফফারা ও পাপ মোচনকারী

আবু উমামা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

তোমরা রাতের সালাত আঁকড়ে ধর, কারণ এটা তোমাদের পূর্বের নেককার লোকদের অভ্যাস এবং তোমাদের রবের নৈকট্য দানকারী, গুনাহের কাফফারা ও পাপ মোচনকারী।

তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৪৯; হাকেম: (১/৩০৮); বায়হাকি: (২/৫০২)

৯. ফরয সালাতের পর রাতের সালাত সর্বোত্তম সালাত

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফু হাদীসে এসেছে: রমযানের পর সর্বোত্তম সিয়াম মহররম মাসের সিয়াম এবং ফরয। সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত রাতের সালাত।

সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৩

১০. কিয়ামুল লাইল মুমিনদের সম্মান

সাহল ইবন সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আগমন করলেন, অতঃপর বললেন:

হে মুহাম্মাদ যত দিন পার বেঁচে নেও, অতঃপর অবশ্যই তুমি মারা যাবে। যাকে ইচ্ছা মহব্বত কর, অবশ্যই তার থেকে তুমি বিচ্ছেদ হবে। যা ইচ্ছা আমল কর, তার প্রতিদান অবশ্যই তোমাকে দেওয়া হবে। অতঃপর বলেন, হে মুহাম্মাদ মুমিনের সম্মান হচ্ছে রাতের সালাত, আর তার ইজ্জত হচ্ছে মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতা।

হাকেম: (৪/৩২৫)

১১. রাতে সালাত আদায়কারী ঈর্ষার পাত্র

কারণ এর সাওয়াব অধিক। এ সালাত দুনিয়া ও তার মধ্যে বিদ্যমান সবকিছু থেকে উত্তম। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

দুজন ব্যতীত কোন ঈর্ষা নেই: এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ কুরআন দান করেছেন, সে কুরআন নিয়ে রাত ও দিনের বিভিন্ন সময় কিয়াম করে। অপর ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, সে তা রাত ও দিনের বিভিন্ন সময় খরচ করে।

সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮১৫

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

দুজন ব্যতীত কোন ঈর্ষা নেই: এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, সে তা সত্য পথে খুব খরচ করে। অপর ব্যক্তি যাকে আল্লাহ হিকমত দান করেছেন, সে তার মাধ্যমে ফয়সালা করে ও মানুষকে তা শিক্ষা দেয়।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮১৬

১২. রাতের সালাতে কুরআন তিলাওয়াত করা বড় গণিমত ও সৌভাগ্যের বিষয়

আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

যে ব্যক্তি দশ আয়াত দ্বারা কিয়াম করল, তাকে গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হবে না। আর যে একশত আয়াত দ্বারা কিয়াম করল, তাকে কানেতিনদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হবে। আর যে এক হাজার আয়াত দ্বারা কিয়াম করল, তাকে মুকানতিরিনদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হবে।

আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৯৮; সহীহ ইবন খুজাইমা: (২/১৮১), হাদিস নং (১১৪২)

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

তোমাদের কেউ কি পছন্দ করে, যখন সে বাড়িতে যাবে সেখানে সে তিনটি মোটাতাজা গাভীন উট (তার মালিকানাধীন) দেখবে? আমরা বললাম: হ্যাঁ, তিনি বললেন: তােমাদের কারাে নিজ সালাতে তিনটি আয়াত তেলাওয়াত করা তিনটি মোটা তাজা উট হতে উত্তম।

সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮০২

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন খতমের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন; আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুরআন খতম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তখন তিনি বলেন, চল্লিশ দিনে, অতঃপর বলেন, এক মাসে, অতঃপর বলেন, পনেরো দিনে, অতঃপর বলেন, দশ দিনে, অতঃপর বলেন, সাত দিনে তিনি বলেন, আমি এর চেয়ে অধিক সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন: তিন দিনের কমে যে খতম করবে, সে কুরআন বুঝবে না।

আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৯০

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Rate the Post

Rating Summary

0.0
0.0 out of 5 stars (based on 0 reviews)
Excellent0%
Very good0%
Average0%
Poor0%
Terrible0%

Latest Reviews

There are no reviews yet. Be the first one to write one.

Related posts

Latest Tafsir

Latest Books

Scroll to Top