বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে বাসর রাতের দোয়া সমূহ ও বাসর রাতের সুন্নত সমূহ।
Table of Contents
Toggleবাসরের সময় স্ত্রীর সাথে সদয় ব্যবহার
যখন সে স্ত্রীর নিকট প্রবেশ করবে তখন তার জন্য মুস্তাহাব যে, তার সাথে সদয় বন্ধুত্ব করবে এবং তাকে শরবত বা অন্য কিছু দিবে।
আসমা বিনতে ইয়াযিদ রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জন্য আয়েশাকে তেল মালিশ করে দিলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলাম। তারপর তাকে খোলা অবস্থায় স্পষ্ট দেখার জন্য তাঁকে আহ্বান করলাম। সুতরাং তিনি আসলেন অতঃপর তার পাশে বসলেন। তারপর দুধের বড় একটি পাত্র নিয়ে আসা হল। তিনি পান করলেন, তারপর তিনি তাঁর দিকে বাড়ালেন, তিনি মাথা নিচু করলেন এবং লজ্জাবোধ করলেন। আসমা বলেন, আমি তাকে ধমকালাম এবং বললাম: তুমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হস্ত থেকে গ্রহণ কর। তিনি বলেন, তারপর সে নিল এবং কিছু পান করল।
তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি কি তোমার বান্ধবীকে দিব। আসমা বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! বরং তা আপনি নেন ও পান করেন। অতঃপর আপনার হস্ত হতে তা আমাকে দিন। তিনি তা নিলেন, অতঃপর পান করলেন, তারপর তা আমার জানুদ্বয়ে রাখলাম। অতঃপর আমি তাকে ঘুরাতে লাগলাম ও আমার ঠোট দ্বারা তা অনুসরণ করতে লাগলাম যেন নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পান করা পাই। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সাথে উপস্থিত মহিলাদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, তাদেরকে তুমি দাও, তারা বললেন, আমরা তা ইচ্ছা করি না, অতঃপর নবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা ক্ষুধা ও মিথ্যা জমা করে না।
আহমাদ
বাসর রাতে স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে দোয়া
বাসর ঘরে প্রবেশ করে স্বামী তার স্ত্রীর মাথার অগ্রভাগে স্বীয় হাত রেখে নিম্নের দোয়া পাঠ করবে।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা; ওয়া খাইরা মা জাবালতাহা আলাইহি; ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা; ওয়া শাররি মা জাবালতাহা আলাইহি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি এর যত কল্যাণ রয়েছে এবং যত কল্যাণ তার স্বভাবে আপনি দিয়েছেন তা চাই। আর এর যত অকল্যাণ রয়েছে এবং যত অকল্যাণ ওর স্বভাব-চরিত্রে আপনি রেখেছেন তা থেকেও আপনার আশ্রয় চাই।
আমর ইবনু শুআয়ব থেকে বর্ণিত
তিনি তার পিতার মাধ্যমে দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোন মহিলাকে বিয়ে অথবা কোন চাকর ক্রয় করে তখন সে যেন বলে, ‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খয়রহা- ওয়া খয়রা মা- জাবালতাহা- ‘আলায়হি ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন্ শাররিহা- ওয়া শাররি মা- জাবালতাহা- ‘আলায়হি’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তার কল্যাণ এবং তাকে যে সৎ চরিত্রের সাথে সৃষ্টি করেছো তার কল্যাণ চাই। আর তোমার কাছে আমি তার অনিষ্ট ও তাকে যে খারাপ স্বভাবের সাথে সৃষ্টি করেছো তা হতে আশ্রয় চাই।)। আর যখন কোন ব্যক্তি উট ক্রয় করে, তখন যেন ঠোঁটের চূড়া ধরে আগের মতো দু‘আ পড়ে। অন্য এক বর্ণনায় মহিলা ও চাকর সম্বদ্ধে বলা হয়েছে, তখন সে যেন তার সামনের চুল ধরে বারাকাতের জন্য দু‘আ করে।
আবু দাউদ ২১৬০, ইবনু মাজাহ ২২৫২, মিশকাতুল মাসাবীহ ২৪৪৬
দুই রাকাত নফল নামাজ ও তার পরে দোয়া
অতঃপর দুই রাকাত নফল নামাজের পর পরিবারের বরকত ও কল্যাণে উভয়ে নিম্নের দোয়া পাঠ করবে। কিংবা স্বামী দোয়া করবে আর স্ত্রী আমিন আমিন বলবে।
اَللّهُمَّ بَارِكْ لِىْ فِىْ أَهْلِىْ وَبَارِكْ لَهُمْ فِىَّ، اَللّهُمَّ اجْمَعْ بَيْنَنَا مَا جَمَعْتَ بِخَيْرٍ و فَرِّقْ بَيْنَنَا إِذَا فَرَّقْتَ إِلَى خَيْرٍ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বারিকলি ফি আহলি, ওয়া বারিক লাহুম ফিইয়্যা; আল্লাহুম্মাজমাঅ বাইনানা মা জামাতা বিখাইরিন ওয়া ওয়া ফাররিক বাইনানা ইজা ফাররাক্বতা ইলা খাইরিন।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আমার পরিবারে বরকত দিন এবং আমার ভিতরেও বরকত দিন পরিবারের জন্য। হে আল্লাহ! আপনি তাদের থেকে আমাকে রিজিক দিন আর আমার থেকে তাদেরকেও রিজিক দিন! হে আল্লাহ! আপনি আমাদের যতদিন একত্রে রাখেন কল্যাণের সঙ্গেই একত্রে রাখুন। আর আমাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিলে কল্যাণের পথেই বিচ্ছেদ ঘটান।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত
রাসূল সাঃ বলেছেন, যখন স্ত্রী তার স্বামীর নিকট যাবে তখন স্বামী দুই রাকাত সালাতের জন্য দাঁড়াবে এবং স্ত্রী তার পিছনে দাঁড়াবে। অতঃপর দু’জন এক সাথে দু’রাক’আত ছালাত আদায় করবে এবং স্বামী বলবে, হে আল্লাহ! আমার কল্যাণের জন্য আমার পরিবারে বরকত দাও এবং আমার পরিবারের কল্যাণের জন্য আমার মাঝে বরকত দাও। হে আল্লাহ! আমার পক্ষ থেকে তাদেরকে এবং তাদের পক্ষ থেকে আমাকে রিযিক দাও। হে আল্লাহ! তুমি ইচ্ছামত আমাদের মাঝে কল্যাণ জমা কর এবং তোমার ইচ্ছামত কল্যাণ পৃথক কর।
ত্বাবারানী, আলবানী, আদাবুয যিফাফ ৯৬ পৃষ্ঠা।
সহবাসের পূর্বে দোয়া
সহবাসের পূর্বে নিম্নের দোয়া পাঠ করবে।
بِاسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা, ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাজাক্বতানা।
অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার নামে আরম্ভ করছি। তুমি আমাদের নিকট হতে শয়তানকে দূরে রাখ! আমাদের যে সন্তান দান করবে (এ মিলনের ফলে) তা থেকেও শয়তানকে দূরে রাখো।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন স্ত্রীর নিকট গমন করে এবং বলে, হে আল্লাহ! আমাকে শয়তান হতে রক্ষা আর আমাকে এর মাধ্যমে যে সন্তান দিবে তাকেও শয়তান থেকে হেফাজত কর। তাহলে যদি তাদের কোন সন্তান জন্মায়, তবে শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না এবং তার উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না। আসমা (রাঃ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর নিকট হতে অনুরূপ রিওয়ায়ত বর্ণনা করেন।
সহীহ বুখারী ৩২৮৩