বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে ইকামত কি, ইকামত বাংলা উচ্চারণ সহ, নামাজের ইকামত দেওয়ার নিয়ম, ইকামতের জবাব ইত্যাদি।
Table of Contents
Toggleইকামত কি
ইকামত অর্থ দাঁড় করানো। উপস্থিত মুসল্লিদেরকে সালাতে দাঁড়িয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি শুনানোর জন্য ‘ইকামত’ দিতে হয়। জামাতে হোক বা একাকী হোক সকল অবস্থায় ফরয সালাতে আযান ও ইকামত দেওয়া সুন্নত।
নাসাঈ হা/৬৬৭-৬৮; আবু দাউদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৬৬৫, ‘আযানের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-৫।
ইকামত বাংলা উচ্চারণ সহ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) প্রমুখ আবু দাউদে বর্ণিত পূর্বোক্ত হাদীস অনুযায়ী ইকামতের কালেমা ১১টি। যথা :
১. (اللهُ أَكْبَرُ) আল্লা-হু আকবার (২ বার)
২. (أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ) আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ,
৩. (أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ) আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ,
৪. (يَّ عَلَى الصَّلَاةِ) হাইয়া ‘আলাছ ছলা-হ,
৫. (حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ) হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ,
৬. (قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ) ক্বাদ ক্বা- মাতিছ ছালাহ, (২ বার),
৭. (اللهُ أَكْبَرُ) আল্লা-হু আকবার (২ বার),
৮. (لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ) লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ
সর্বমোট ১১টি।
আবু দাউদ হা/৪৯৯, আওনুল মাবুদ হা/৪৯৫।
নামাজের ইকামত দেওয়ার নিয়ম
উচ্চকণ্ঠের অধিকারী হওয়ায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বেলাল (রাঃ)-কে ‘আযান’ দিতে বলেন এবং প্রথম স্বপ্ন বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ)-কে ‘একামত’ দিতে বলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, বেলালকে দু’বার করে আযান ও একবার করে ইকামত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬৪১, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘আযান’ অনুচ্ছেদ-৪।
এইভাবে ইসলামের ইতিহাসে দু’বার করে আযান ও একবার করে ইকামত-এর প্রচলন হয়। ৮ম হিজরী সনে মক্কা বিজয়ের পর মদীনায় ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বেলালকে মসজিদে নববীতে স্থায়ীভাবে মুওয়াযযিন নিযুক্ত করেন। ১১ হিজরী সনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর বেলাল (রাঃ) সিরিয়ায় হিজরত করেন এবং নিজ শিষ্য সা’দ আল-ক্বারাযকে মদীনায় উক্ত দায়িত্বে রেখে যান। হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় আযান দু’বার ও ইকামত একবার করে দেওয়ার রেওয়াজ ছিল, ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ দুবার ব্যতীত।
আবু দাউদ, নাসাঈ, দারেমী, মিশকাত হা/৬৪৩।
প্রকাশ থাকে যে, এখানে দু’বার আল্লা-হু আকবার-কে একটি জোড়া হিসেবে ‘একবার’ (মার্রাতান) গণ্য করা হয়েছে। তাছাড়া ‘আল্লাহ’ (i) শব্দের হামযাহ (I) ‘ওয়াসলী’ হওয়ার কারণে প্রথম ‘আল্লা-হু আকবার’-এর সাথে পরের ‘আল্লা-হু আকবার’ মিলিয়ে পড়া যাবে। একবার ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ এবং প্রথমে ও শেষে একবার করে ‘আল্লা-হু আকবার’ বলার মতামতটি ‘শায’ যা অগ্রহণযোগ্য।
নায়লুল আওত্বার, ‘আযানের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ, ২/১০৬।
কেননা আবু দাঊদে আযান ও ইকামতের কালেমা সমূহের যথাযথ বিবরণ প্রদত্ত হয়েছে।
আবু দাঊদ হা/৪৯৯, ‘সালাত’ অধ্যায়-২, ‘কিভাবে আযান দিতে হয়’ অনুচ্ছেদ-২৮।
ইমাম খাত্তাবী বলেন, মক্কা-মদিনা সহ সমগ্র হিজায, সিরিয়া, ইয়ামান, মিশর, মরক্কো এবং ইসলামী বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে একবার করে ইকামত দেওয়ার নিয়ম চালু আছে এবং এটাই প্রায় সমস্ত উলামায়ে ইসলামের মাযহাব।
আওনুল মাবুদ ২/১৭৫, হা/৪৯৫-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।
ইমাম বাগাভী বলেন, এটাই অধিকাংশ বিদ্বানের মাযহাব।
নায়লুল আওত্বার ‘আযানের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ, ২/১০৬।
দু’বার একামত-এর রাবী হযরত আবু মাহফূরাহ (রাঃ) নিজে ও তাঁর পুত্র হযরত বেলাল (রাঃ) -এর অনুসরণে একবার করে ‘ইকামত’ দিতেন।
আবু দাউদ (আওনুল মাবুদ সহ), হা/৪৯৫-এর ভাষ্য পৃ ২/১৭৫ দ্রষ্টব্য।
ইকামতের জবাব
ইকামতের জবাব দেওয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদিস বর্ণিত হয়নি। তাই ইকামতের জবাব দিতে হবে বা দেওয়া সুন্নাত এমনটি নয়। কেউ চাইলে দিতে পারে, না চাইলে নাই। জবাব দিলে ইকামাতের শব্দগুলোই হুবহু বলবে। আবু দাউদের ৫২৮ নং হাদীসে আছে, ‘কাদ কামাতিস সলাহ’ বললে এর জবাবে তোমরা বলিও ‘আকা-মাহুল্লাহু অ-আদা-মাহা। এ হাদীসটি একেবারেই দুর্বল (ইরওয়াওল গালীল: ২৪১)। অতএব, এটি না বলাই ভালো। কেননা, দুর্বল হাদীস দিয়ে কোন হুকুম সাব্যস্ত করা যায় না।