বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; নুয়াইম বিন হাম্মাদ রচিত হাদিস গ্রন্থ কিতাবুল ফিতান এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন একদা রাসূল সাঃ আমাদের নিয়ে একটু বেলা থাকতেই আসরের নামায আদায় করেন। অতঃপর সূর্য অস্ত ভাষণ দিলেন। উক্ত ভাষণে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে তার সমস্ত কিছুই বর্ণনা করেন। তাঁর সেই ভাষণটি যারা ভুলে যাওয়ার তারা ভুলে গিয়েছে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১ ]
হাদিস – ২
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা আমার সম্মুখে দুনিয়াকে উঁচু করে ধরলেন। অতঃপর দুনিয়াকে এবং তাতে কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিতব্য বিষয়গুলো দেখছিলাম যেমন আমার দুই হাতের তালুগুলো দেখছি এটা হলো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বিষয়, যা তিনি প্রকাশ করেছিলেন তার পূর্ববর্তি নবীগনকে ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ২]
হাদিস – ৩
হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিতব্য সমস্ত ফিতনা সম্পর্কে আমি সবচেয়ে বেশী অবগত। রাসূল সাঃ আমার নিকট সেই ফিতনা সম্পর্কে অনেক গোপন বিষয় আলোচনা করেছেন যা আমাকে ছাড়া অন্য কারো কাছে বর্ণনা করেন্নি। কিন্তু একদিন রাসূল সাঃ এক মজলিসে আগমণ করলেন। এরপর ছোট বড় বহু ফিতনা সম্পর্কে আলোচনা করলেন। উল্লেখ্য ঐ মজলিসে যারা উপস্থিত ছিল আমি ছাড়া প্রত্যেকেই দুনিয়া থেকে চলে গেছেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩ ]
হাদিস – ৪
হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, ঘোর অন্ধকার রাত্রির টুকরোর মত ফিতনা একের পর এক আসতেই থাকবে। তা তোমাদের কাছে গরুর চেহারার ন্যায় একই রকম মনে হবে। লোকেরা জানবেনা যে কোন টা কি কারণে হচ্ছে। [ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৪ ]
হাদিস – ৫
হযরত হুযাইফা বা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন । এই ফিতনা গরুর ন্যায় । তাতে বহু মানুষ ধ্বংশ হবে । তবে যারা পূর্বেই এ সম্পর্কে অবগতি লাভ করবে তারা ধ্বংশ হবে না ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৫ ]
হাদিস – ৬
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেন,
কিয়ামতের পূর্বে যখন যুগ পরস্পর নিকটে এসে যাবে তোমাদের কাছে কালো, বুড়ো ধরনের একটি উট এসে বসবে ফিতনার রূপ ধারণ করে। যেন মনে হবে সেটা অন্ধকারে ছেয়ে যাওয়া রাত্রের একটি টুকরা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬ ]
হাদিস – ৭
কর্য ইবনে আল্কামা খুযায়ী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে এক লোক জানতে চাইল ইসলামের কি কোনো শেষ রয়েছে? জবাবে রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন হ্যাঁ, আরব বা অনারব যে কোনো এলাকার কারো ঘরের সদস্যদের প্রতি আল্লাহ তাআলা কল্যাণ কামনা করলে তাদেরকে তিনি ইসলামের অন্তর্ভুক্ত করেন।
জিজ্ঞাসা করা হল, এরপর কি হবে? রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, এরপর পাহাড় তুল্য ফিনা প্রকাশ পাবে। অতঃপর ঐ লোক বলল, আল্লাহর কসম! ইনশাআল্লাহ! ইয়া রাসূলুল্লাহ! এটা কখনো হতে পারেনা। রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, কসম সে সত্ত্বার যার হাতে আমার রূহ, অবশ্যই হবে। এরপর উক্ত ফিৎনা চলাকালীন তোমরা আশ্রয় নিবে ফনাতুলা কালো বিষাক্ত সাপের। যেখানে তোমরা একে অপরের সাথে মারামারি, হানাহানিতে লিপ্ত হবে। বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইবনে শিহাব যুহরী রহঃ বলেন, কালো বিষাক্ত যখন কাউকে দংশন করে তখন দংশিত স্থানে মুখের লালা জাতীয় কিছু বিষ লাগিয়ে দেয়ার পর মাথা উঠিয়ে লেজের উপর দাড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৭]
হাদিস – ১০
হযরত আবু মুসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, কিয়ামত আসার পূর্বে ‘হারজ’ সংঘটিত হবে। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো হারজ কী? তিনি বললেন হত্যা এবং মিথ্যা লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো হে আল্লাহর রাসূল! এখন কাফেররা যেভাবে নিহত হচ্ছে তার চেয়ে বেশী হত্যা সংঘটিত হবে? রাসূল সাঃ বললেন তোমাদের মাধ্যমে কাফেররা নিহত হবেনা বরং মানুষ তার প্রতিবেশী, আপন ভাই ও চাচাতো ভাইকে হত্যা করবে ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ-১০]
হাদিস – ১১
হযরত উসাইদ ইবনে মুতাশাসি ইবনে মুয়াবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু মুসা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামত আসার পূর্বে মুসলমানদের মধ্য হতে ফিতনা ও হত্যা সংঘটিত হবে। এমনকি মানুষ তার দাদা, চাচাতো ভাই, পিতা ও আপন ভাইকে হত্যা করবে । আল্লাহর শপথ! আমি আশংকা করছি যে, না জানি আমি এবং তোমরা তাতে জড়িত হয়ে যাই।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১১ ]
হাদিস – ১২
হযরত আবু মুসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় তোমাদের সম্মুখে ঘোর অন্ধকার রাত্রির একাংশের ন্যায় ফিতনা সংঘটিত হতে থাকবে,তাতে কোন ব্যক্তি সকালে মুমিন ও বিকালে কাফের এবং বিকালে মুমিন ও সকালে কাফেরে পরিণত হতে থাকবে ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১২ ]
হাদিস- ১৩
হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, অন্ধকার রাত্রির টুকরোর মত ফিতনা দেখা দিবে। সে সময় সকালে একজন মুমিন হলে বিকালে কাফের হয়ে যাবে। বিকালে মুমিন হলে সকালে কাফের হয়ে যাবে। তাদের মধ্যে কেউ পার্থিব সামান্য সামগ্রির বিনিময়ে তার দ্বীন বিক্রি করে বসবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৩ ]
হাদিস ১৪
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এই ফিতনা ঘোর অন্ধকার রাত্রির একাংশের ন্যায় ছায়া ফেলবে। যখনই কোন এক প্রকার ফিতনা চলে যাবে, তখনই আরেক প্রকার ফিতনা প্রকাশ পাবে। তাতে কোন ব্যক্তি সকালে মুমিন হলে বিকালে কাফের হয়ে যাবে, এবং বিকালে মুমিন হলে সকালে কাফের হয়ে যাবে। আর তখন লোকেরা পার্থিব সামান্য সামগ্রির বিনিময়ে তাদের দ্বীনকে বিক্রি করে দিবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৪ ]
হাদিস – ১৫
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় ফিনা আল্লাহর শহরগুলোতে এমনভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকবে তার লাগামকে সাড়ানো হবে। কারো জন্য তাকে জাগ্রত করা জায়েয হবেনা। ধ্বংস ঐসব ব্যক্তির জন্য যারা তার লাগাম ধরে টানাটানি করবে।
আবু জাহিরিয়্যাহ বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ বলেন, নিঃসন্দেহে তোমরা এ জগতে নানান ধরনের বালা-মসিবত এবং ফিৎনা-ফাসাদই দেখতে পাবে। ধীরে ধীরে মানুষের যাবতীয় অবস্থা কঠিনই হতে থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৫ ]
হাদিস ১৬
রাসুলুল্লাহ সাঃ এর রহস্য সম্বন্ধে অবগত সাহাবী হযরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাযিঃ এরশাদ করেন, ফিৎনার সাথে সংশ্লিষ্ট লোক থেকে প্রায় তিনশতজন পর্যন্ত এমন রয়েছে, আমি ইচ্ছা করলে তাদের নাম, তাদের পিতা এবং গ্রামের নাম পর্যন্ত বলতে পারবো। যারা কিয়ামত পর্যন্ত। তার সবকিছুই রাসূলুল্লাহ সাঃ আমাকে জানিয়ে গিয়েছেন।
উপস্থিত লোকজন জিজ্ঞাসা করলো, সরাসরি কি তাদেরকে দেখানো হয়েছে? উত্তরে তিনি বললেন, তাদের আকৃতি দেখানো হয়েছে। যাদেরকে ওলামায়ে কেরাম এবং ফুকাহায়ে এজাম চিনতে পারবেন। হযরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাযিঃ বলেন, তোমরা রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে কল্যাণ সম্বন্ধে জানতে চাও, কিন্তু আমি জানতে চেষ্টা করি অকল্যাণ বা খারাপী সম্বন্ধে আর তোমরা তাঁর কাছে জানতে চাও ঘটে যাওয়া বিষয় সম্বন্ধে, আমি জানতে চাই ভবিষ্যতে যা হবে সে সম্বন্ধে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৬ ]
হাদিস – ১৭
হযরত হুজাইফা রাযিঃ এরশাদ করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি, আমার ওম্মতের মধ্যে এমন তিনশত লোক প্রকাশ পাবে যাদের সাথে তিনশত পতাকা থাকবে, যদ্বারা তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাবে। বংশীয়ভাবে এরা খুবই পরিচিত হবে। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কথা প্রকাশ করলেও যুদ্ধ করবে সুন্নাতের বিপরীত পথভ্রষ্টার উপর।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৭ ]