বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; জাকারিয়া মাসুদ লিখিত বই হিজাব আমার পরিচয় এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
আমি হিজাব। আসমানের ওপর থেকে আমাকে তোমার কাছে পাঠানো হয়েছে। আমি তোমার সার্বক্ষণিক সঙ্গী। তোমার পরিচয়পত্র। না, কোনো জাতীয়তাবাদী আইডি কার্ড না। তোমার জীবন-দর্শনের পরিচয়পত্র। আমি তোমার পরিচ্ছন্ন সত্তার পরিচয় বহনকারী। মানুষকে তোমার মতাদর্শ ও তোমার চিন্তা-চেতনা সম্পর্কে অবহিত করি আমি। যে ব্যক্তি তোমার সাথে কথা বলতে চায়, তাকে শুধু তোমার চিন্তার দিকে তাকানোর নির্দেশ দিই। সৌন্দর্য ও সাজসজ্জা থেকে আড়াল করে রাখি তোমায়। তোমার দেহসুষমা জানতে দিই না কাউকেই।
আমি হিজাব। বিস্তৃত দিগন্তে সগৌরবে উড়তে থাকা বিজয়-নিশান। আমি এক সুস্পষ্ট বার্তা। আমি বার্তা দিয়ে যাই ক্ষণে ক্ষণে। পলে পলে জানিয়ে যাই আল্লাহ-ভীতির কথা। তোমার অন্তরে লুকিয়ে আছে তাকওয়া, সদা জাগ্রত আছে আল্লাহর ভয়, আর তারই প্রকাশ ঘটবে আমাকে জড়ানোর মধ্য দিয়ে। আমাকে আপন করে নিলে তুমি নিজের ঈমানি পরিচয়কেই ধারণ করবে। ভেতরে ও বাইরে—সবদিক দিয়েই নিজের আদর্শ আঁকড়ে ধরার সুযোগ পাবে।
আমি একটি শ্যামল কানন। সুন্দর ফুল ও সুমিষ্ট সুবাসে মুখরিত বাগিচা। সুনিবিড় ছায়ায় ঢাকা আমার প্রাঙ্গণ। বিহঙ্গের কলকাকলিতে মুখরিত আমার আঙিনা। কিশলয়ে ছেয়ে আছে এই কুঞ্জের প্রতিটি গাছ। আমার প্রাঙ্গণে যে-ই প্রবেশ করে, তাকেই আমি ছায়াবীথিতলে স্থান দিই। আমার আঙিনায় বিচরণের উপকারিতা যে অনুধাবন করতে পারে, তাকে আমি আমার মাঝে প্রবেশ করতে উদ্বুদ্ধ করি। তোমাকেও আহ্বান জানাচ্ছি। এসো, আমার সুবিশাল অঙ্গনে এসো। প্রজাপতির মতন একবার ঘুরে যাও আমার আঙিনা থেকে। নির্মল ছায়ায় বিশ্রাম নিয়ে যাও একটিবার। তোমার তৃষিত আকুল আঁখিকে একটু প্রশান্ত করে নাও।
আমি তোমার রক্ষাকবচ। তোমার সুরক্ষাদ্বার। কিন্তু অন্যদের কাছে যদি আমার উপকারিতাগুলো না বলো, তা হলে আমি পরিণত হব নিতান্ত এক দায়সারা অভ্যাসে। আমি হয়ে যাব ভারী বোঝার মতো কিছু একটা। যা থেকে তুমি সারাক্ষণ পালাতে চাইবে। যার হাত থেকে বাঁচার জন্যে হাঁসফাঁস করবে। যাকে অবহেলা করতেও তুমি পিছপা হবে না। আমার শিষ্টাচার মানার ক্ষেত্রে উদাসীন হয়ে পড়বে তুমি।
তখন আমি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ব তোমার জীবনে। আল্লাহ আমাকে যে জন্যে আবশ্যক করেছেন, সে প্রভাবটা আর খাটাতে পারব না। বাড়িয়ে দিতে পারব না তোমার তাকওয়ার স্তর। পরিবর্তন আসবে না তোমার চালচলনে। আমি হয়ে যাব আত্মাবিহীন এক দেহ। অন্তঃসারশূন্য এক আকৃতি। মাথায় চাপিয়ে দেওয়া একটুকরো কাপড় ছাড়া আমাকে আর কিছুই মনে হবে না। দোহাই লাগে, আমাকে অন্তর দিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করো।
আমি হিজাব। নারীজাতির জন্যে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আসা অমূল্য নিয়ামাতের একটি৷ অথচ তুমি কি আমায় বোঝা মনে করো? চেহারায় চাপিয়ে দেওয়া একটুকরো কাপড় মনে করো? হায়, কবে তোমার হুঁশ হবে! কবে তুমি আমার জন্যে শুকরিয়া আদায় করবে আল্লাহর কাছে? তুমি কি শোনোনি রবের বাণী?
“তোমরা যদি শুকরিয়া আদায় করো তবে আমি তোমাদেরকে অবশ্যই বাড়িয়ে দেব।” (সূরা ইবরাহীম, ১৪:৭)।
তবে কেন পর ভেবে বারবার দূরে ঠেলে দিচ্ছ আমায়? তোমার বেপর্দা চলাফেরা আমাকে খুব কষ্ট দেয়। বেপর্দা চলাফেরার মানে হলো নিজেকে উন্মুক্ত রাখা, অন্যের চোখের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করা, নিজের দেহকে পরপুরুষের সামনে উন্মুক্ত করে দেওয়া।
নারীদের সৌন্দর্য শুধু দেহেই না। এ সৌন্দর্যের আছে বাহারি রঙ, রকমারি ধারা। বাহারি পোশাক, আকর্ষণীয় অঙ্গভঙ্গি, মায়াময়ী হাসি, ডাগর চোখ–এ সবই পুরুষকে প্রলুব্ধ করে। নারীর সাথে কথা বলা, হাসি-ঠাট্টা করা, তাকানো, নারীকণ্ঠ শোনা—এ সবই প্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তোলে। আর এগুলোর প্রতিবন্ধক হলাম আমি। তাই তো আল্লাহ আমাকে তোমার পোশাক হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। আমাকে আবশ্যক করে দিয়েছেন তোমার জন্যে।
আমি হিজাব। মাথায় ঝুলতে থাকা কোনো ত্যানা নই। আমি সেই রাজমুকুট, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমায় সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন। যেন গর্বের সাথে নিজের আদর্শিক পরিচয় নিয়ে চলতে পারো। যেন লজ্জাশীলতা দিয়ে পথ দেখাতে পারো বিশ্ববাসীকে। আমি নারীজাতির জন্যে মর্যাদার উপকরণ হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। কিন্তু তোমরা আমায় বাজারের পণ্য বানিয়েছ। আমাকে ব্যবহার করছ অপকর্ম আড়াল করার ঢাল হিসেবে। আমাকে যথাযথ সম্মান দাওনি। তাই তো লোকে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ছেলে-ছোকরারা।
ইদানীং তোমরা বেপর্দা হওয়াকেই আধুনিকতা বানিয়েছ। তবে বেপর্দার বিষয়টা এখন আর হিজাবহীনা মেয়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ না। বোরখা পরেও যদি কোনো মেয়ে সৌন্দর্য প্রকাশ করে, সেটাও পর্দার খেলাফ। নরম সুরে কথা বলা, পারফিউম মেখে বাইরে যাওয়া, শরীরের আকৃতি স্পষ্ট করে এমন বোরখা পরা, পুরুষদের সাথে হাসি-ঠাট্টায় জড়ানো—এগুলো সবই পর্দার খেলাফ। এগুলো পর্দাবিরোধী নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি, যা হিজাবের নাম দিয়ে চলছে। এ ধরনের অপকর্ম থেকে আমি সম্পূর্ণ মুক্ত।
প্রিয় সহযাত্রী, হঠকারিতা কোরো না আমার সাথে। বাজারের পণ্য বানিয়ো না আমাকে। আমি তোমার আবরণ। তোমার ইজ্জত আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে আমার সাথে। আমি ছাড়া তুমি বেআবরু, একা। আমি তোমার বন্ধু, পরম কল্যাণকামী। আমাকে হাসির পাত্রে পরিণত কোরো না। আমি মহান আল্লাহর অকাট্য বিধান। সালাত সাওমের মতো অবশ্যপালনীয় নির্দেশ। আমাকে অবহেলা করে পাশ কাটিয়ে যেয়ো না। দোহাই লাগে। সতর্ক হও। নয়তো কিয়ামাতের মাঠে তোমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করব আল্লাহর আদালতে।
আমি বলব, “ওগো ন্যায়বান আল্লাহ, এই মেয়ে আমাকে কষ্ট দিয়েছে। পশ্চিমা সভ্যতাকে খুশি করতে গিয়ে নানা কৌশলে আমাকে বিকৃত করেছে। মাথার ওপর চাপিয়ে রাখা কাপড়ের টুকরোকে হিজাব বলে আখ্যা দিয়েছে। ওগো আল্লাহ, তোমার বিধান বিকৃতকারীর বিরুদ্ধে আমি মামলা দায়ের করলাম। তুমিই এর বিচার করো।”
আমি হিজাব। আমি তোমার বড়ো বোনের মতো। তুমি আমাকে মনে করতে পারো সবচেয়ে ভালো বান্ধবী। এমন বান্ধবী, যে কিনা তোমার কল্যাণ কামনা করে। তোমাকে নিয়ে ভাবে। তুমি যেন দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তিতে থাকতে পারো, সেটা নিয়ে চিন্তাফিকির করে।
অনেকদিন থেকেই আমি তোমাকে পর্যবেক্ষণ করছি! তুমি যেখানেই যাচ্ছ, আমি পিছুপিছু ছুটছি! তোমার বেপর্দা চলাফেরা দেখে অন্তরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে! নিভৃতে চোখের জল ফেলছি তোমার জন্যে! বিশ্বাস করো, আমার চোখের সামনে তুমি যখন পরপুরুষের সাথে মোলাকাত করো, তখন বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে যায়! আমার ইচ্ছে করে তোমাকে শাসন করতে! কিন্তু এক-পা এগোলে দু-পা পিছিয়ে যাই।
বেশ কিছুদিন ধরেই চেষ্টা করছিলাম তোমাকে কিছু বলব! কিন্তু ফুরসত পাচ্ছিলাম না! আজ সে সুযোগ এসেছে! প্রাণখুলে আজকে কিছু কথা শেয়ার করব তোমার সাথে! জানাব অভিমানী হৃদয়ের অব্যক্ত কিছু আকুতি।
তুমি আমার কথাগুলো হৃদয় দিয়ে বোঝার চেষ্টা কোরো, কেমন?