বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহঃ লিখিত বই সময়ের মূল্য বুঝতেন যারা এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
আজ থেকে প্রায় পনের বছর আগের কথা। তখন আমি শহীদবাড়ীয়া জেলাধীন হরষপুর গ্রামের দারুল উলূম মাদরাসার হেফয বিভাগের তালিবুল ইলম। আমার উস্তায হাফেয নূরুজ্জামান ছাহেব (দা.বা.)।
আমার ‘হৃদয়-যমিনে’ বাংলা ভাষার চর্চা ও বাংলা লেখার অনুশীলনের প্রতি আগ্রহ ও অনুরাগের প্রথম বীজটি রোপিত হয় তাঁরই হাতে।
আমার এই উস্তাযের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সীমিত। কিন্তু তিনি স্বশিক্ষিত। তাঁর লিখন-ক্ষমতা সত্যিই আশ্চর্যজনক। তাঁর রচিত আল্লামা ফখরে বাঙ্গাল তাজুল ইসলাম (রহ.) এর জীবনী গ্রন্থ ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
তাঁরই মুখে আমি প্রথম সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.) এর কথা শুনেছি। আর তাঁর ব্যক্তিত্ব ও কর্মপরিধি সম্পর্কে জেনেছি। হাফেয ছাহেব হুযুরের কাছেই আমার বাংলা চর্চার হাতেখড়ি। মাদরাসার তাহছীলের প্রয়োজনে তিনি বিভিন্ন জনের কাছে চিঠি লিখতেন। মাঝে মাঝে সেগুলো আমাকে পড়ে শোনাতেন। আমি বিমুগ্ধ ও বিমোহিত হয়ে শুনতাম। আর মনে মনে বলতাম, হায়, আমিও যদি এমনভাবে লিখতে পারতাম! তখন থেকেই আমার মাঝে জাগ্রত হয়েছে কলম ধরার প্রেরণা এবং লেখক হওয়ার বাসনা।
হেফ্য শেষ করার পর আল্লাহর অনুগ্রহে মাদরাসাতুল মাদীনায় অধ্যয়নের সুযোগ হয়। এখন তো অভিভাবকগণ আদীব হুযুর ও তাঁর প্রণীত নেছাব সম্পর্কে পূর্ণ অবগতি নিয়েই সেখানে ভর্তি করেন, কিন্তু আমাদের সময়ে বিষয়টি তেমন ছিল না। আল্লাহ তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে আমাকে এই কাফেলায় শামিল করে দিয়েছিলেন।
মাদরাসাতুল মাদীনার অনুকূল পরিবেশে সেই সুপ্ত বীজটি অঙ্কুরিত হয়ে স্নিগ্ধ আলোর পরশ লাভ করল।
প্রথম তিন বছর ‘আল-কলম’ (পুষ্প)ই ছিল আমার এ পথের দিশারী। এরপর আলিয়া-তে পরীক্ষা দেয়ার পারিবারিক চাপ সামলাতে গিয়ে নদভী হুযুরের (দা.বা.) পরামর্শে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে, দারুল মা’আরিফে ভর্তি হলাম। সেখানে পেলাম আল্লামা সুলতান যওক নদভী (দা.বা.) এর বিশাল ব্যক্তিত্বের সুশীতল স্নেহ, ছায়া এবং অকৃত্রিম মমতা ও ভালবাসা। দেখতে দেখতে দারুল মাআরিফে চার বছর কেটে যায়।
চার বছর শেষ করে দারুল মা’আরিফ থেকে ফারেগ হয়ে কিশোরগঞ্জ শোলাকিয়ায় মাওলানা ইসমাইল ছাহেব (পীর ছাহেব হুযুর) এর ‘মাদরাসায়ে বাগে জান্নাত’ এ খেদমতে নিয়োজিত হই। এখানে আসার কিছুদিনের মধ্যেই বিশিষ্ট মুহাদ্দিস এবং সুলেখক শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবুগুদ্দাহ কর্তৃক রচিত এই মূল্যবান কিতাবটির অনুবাদ শুরু করি।
প্রায় এক বছর পর কিতাবটির অনুবাদ যখন সমাপ্ত হয় তখন আমি ঢাকায়, বাসাবোস্থ মাদরাসাতুল হুদার শিক্ষক। তারপর নিজের যোগ্যতার গণ্ডিতে যতদূর সম্ভব অনুবাদ পরিমার্জনা করে নদভী হুযুরের কাছে অর্পণ করি। মাদরাসাতুল হুদার ইউসুফ, মাইমুন, শাফায়াত ও ইকবাল সাগ্রহে পরিচ্ছন্ন অনুলিখনের কাজটি আঞ্জাম দিয়েছিল। আল্লাহ্ তাদের জাযায়ে খায়র দান করুন।
এদিকে প্রায় একই সময়ে মাকামাতে হারীরীর একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ সংকলনের কাজ শুরু করি এবং সে কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে এই কিতাবটি প্রায় ৭/৮ মাস খাতার ভেতরে বন্দী হয়ে থাকে।
তারপর কিতাবটির প্রথম দিকের কিছু পৃষ্ঠা কম্পোজ করে কিতাবের মূল লেখক শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ ছাহেবের প্রত্যক্ষ শাগরেদ মুফতী আবদুল মালেক ছাহেব (দা.বা.) এর সামনে পেশ করি।
এ উপলক্ষে দীর্ঘক্ষণ মুফতী ছাহেব হুযুরের কাছে অবস্থান করলাম। বেশ ব্যস্ততার মাঝেও তিনি আমাকে সময় দিলেন। আপ্যায়নপর্ব শেষে তিনি অনূদিত পৃষ্ঠাগুলো পড়লেন এবং অনুবাদের ভাষাটাকে আরেকটু সহজ ও মসৃণ করার পরামর্শ দিলেন।
এরও প্রায় ৭/৮ মাস পর নদভী হুযুরের প্রাথমিক পরিমার্জনার পর পূর্ণ বইটি কম্পোজ হয়ে এল। দ্বিতীয় প্রুফ দেখার পর মনে হল, এবার মুফতী আবদুল মালেক ছাহেব (দা.বা.) এর সামনে সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি পেশ করে একটি ভূমিকা বা অন্তত একটি দু’আবাক্যের আবেদন জানাব।
মুফতী ছাহেব হুযুরের কাছে ফোন করে সাক্ষাতের অনুমতিপ্রার্থনা করলাম। সাক্ষাতের উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তু জানার পর হুযুর দরদমাখা কণ্ঠে বললেন, “দেখ, তোমার পাণ্ডুলিপি আমাকে দেখতে দিলে ব্যস্ততার কারণে দীর্ঘদিন এটা এখানেই পড়ে থাকবে। এরচে’ ভাল তুমি এটা প্রকাশের কাজে এগিয়ে যাও। তাছাড়া নদভী ছাহেব তো দেখেছেনই! আমি দু’আ করি, আল্লাহ্ এই খেদমতকে কবুল করুন।” তখন আমি নিরুপায় হয়ে ক্ষীণস্বরে “আমীন” বললাম। এরপর আর কিছু বলা বা পীড়াপীড়ি করা সঙ্গত মনে হলো না।
তৃতীয় প্রুফ যখন দেখতে শুরু করলাম তখন হঠাৎ মনে হল— মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেব তো দু’আ ও প্রেরণা দিয়ে আমাকে কৃতার্থ করেছেন কিন্তু একজন মুরুব্বীর লিখিত দু’আ থাকলে মনে হয় আরো ভাল হয়। এই ভাবনার বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ২০ রমজান ১৪৩৩ হিজরী দারুল মা’আরিফের উদ্দেশ্যে সফর করলাম। যওক হুযুরের সাথে যখন দেখা হল তখন প্রায় দুপুর ১২ টা। সাক্ষাতের শুরুতেই হুযুরকে আমার সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করলাম।
আজ রাতেই হুযুর ইতিকাফে বসবেন। তাই অনেক ব্যস্ততা। তা সত্ত্বেও প্রায় দেড়ঘণ্টাব্যাপী হুযুর বইটির আদ্যপ্রান্ত পড়লেন। কয়েক স্থানে লাল কালির আঁচড়ে আমাকে ধন্য করলেন। এক জায়গায় আমি অনুবাদ করেছিলাম “কাতারী কাপড়” হুযুর নিজে উঠে গিয়ে শামায়েলে তিরমিযী আনলেন এবং আমার অনুবাদ শুধরে দিলেন, লিখলেন- “নকশাকৃত ইয়ামানী কাপড়”। যাওক সাহেব হুযুরের এই আচরণে আমি অভিভূত হলাম। সময় সংক্ষিপ্ততার কারণে অবশেষে হুযুর বললেন— এনামের কাছে তোমার ই- মেইল ঠিকানা দিয়ে যাও আমি পরবর্তীতে দুই সপ্তাহ পর আমার মন্তব্য পাঠিয়ে দেব ইনশাআল্লাহ।
এরপর হুযুর থেকে দু’আ চেয়ে বিদায় নিলাম দুই সপ্তাহ পর। এনাম ভাই ও শাহেদ ভাইয়ের সহযোগিতায় হুযুরের মন্তব্যটি আমার হাতে পৌঁছল। এখন বন্ধুবর শাহাদাৎ ভাইয়ের প্রচেষ্টায় বইটি মুদ্রিত হওয়ার পথে ৷ আল্লাহ তাকে প্রকাশনার ক্ষেত্রে প্রকৃত ইখলাস ও কবুলিয়াত দান করুন ৷ আল্লাহ তা’আলা এই অনুবাদগ্রন্থের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে সর্বোত্তম বিনিময় দান করুন।
পরিশেষে পাঠকবর্গের কাছে নিবেদন, তারা যেন অনূদিত এই কিতাবটির মাকবুলিয়্যাতের জন্য এবং অধম অনুবাদকের দুনিয়া-আখিরাতের কল্যাণের জন্য দু’আ করেন।
ইমরানুল হক