বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর লিখিত বই খুতবাতুল ইসলাম এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
মহান আল্লাহ ইসলামের মাধ্যমে মানবজাতিকে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা প্রদান করেছেন। ইসলামের ন্যূনতম অনুসরণ একজন মানুষকে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক অসুস্থতা ও ভারসাম্যহীনতা থেকে রক্ষা করে। মানব দেহের মধ্যে যেমন মহান স্রষ্টা একটি বৈজ্ঞানিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা রেখে দিয়েছেন, তেমনি স্বভাবধর্ম ইসলামের মধ্যে একটি প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে।
আমরা জানি যে, প্রতিনিয়ত আমরা আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস, পানাহার ইত্যাদির মাধ্যমে লক্ষ কোটি জীবানু গ্রহণ করছি, কিন্তু আমরা সর্বদা এ সকল রোগে আক্রান্ত হচ্ছি না। কারণ দেহের মধ্যে যে স্বয়ংক্রিয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে তা এ সকল আক্রমনকারীকে ধ্বংস বা দুর্বল করে দিচ্ছে। অনুরূপভাবে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আমাদেরকে স্বয়ংক্রিয় প্রতিরোধ দিচ্ছে, যা আমাদেরকে অনেক ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। মানুষের দায়িত্ব হলো দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা রক্ষা করা ও শক্তিশালী করা। আর এজন্য প্রয়োজন হলো প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসরণ করা ও প্রকৃতি বিরুদ্ধ কর্ম থেকে বিরত থাকা।
একইভাবে ইসলামের ধর্মীয় ব্যবস্থার মধ্যে মহান আল্লাহ মানুষের দৈহিক, মানসিক, পারিবারিক ও সামাজিক সকল বক্রতা, অসুস্থতা বা ভারসাম্যহীনতার বিরুদ্ধে স্বয়ংক্রিয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা রেখেছেন। রাসূলুল্লাহ -এর প্রদর্শিত পদ্ধতিতে ইসলামের বিধিবিধান ন্যূনতম পালন করতে পারলেই একজন মুসলিম এ সকল বক্রতা, জটিলতা বা অসুস্থতা থেকে বহুলাংশে রক্ষা পান। এগুলির বিস্তারিত আলোচনা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। শুধু এ ব্যবস্থার মধ্যে সালাতুল জুমুআ ও খুতবার অবস্থান আমরা পর্যালোচনা করব।
খুতবাতুল ইসলাম pdf
মানুষ সামাজিক প্রাণী। মানুষের মধ্যে নিজের প্রাকৃতিক, জৈবিক, দৈহিক, মানসিক ইত্যাদি স্বার্থ রক্ষা করার শক্তিশালী প্রবণতা রয়েছে। এগুলি আমাদের মধ্যে অন্যান্য মানবেতর প্রাণী বা পশুর মতই বিদ্যমান। তাই এগুলিকে “পাশবিক” বলা হয়। পাশাপাশি আশপাশের অন্যান্য মানুষের স্বার্থে নিজের এ সকল স্বার্থ বিসর্জন দেওয়ার শক্তিশালী প্রবণতা ও মানসিকতাও তার মধ্যে বিদ্যমান। দ্বিতীয় প্রকারের এ প্রবণতাই মানুষকে “পশু” থেকে পৃথক করে। এজন্য এগুলিকে “মানবিক মূল্যবোধ” বলে আখ্যায়িত করা হয়। “পাশবিক” প্রবণতাগুলি সামাজিক বা মানবিক প্রবণতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হলে মানুষ ব্যক্তিস্বার্থে হিংস্র, দুর্নীতিবাজ ও ধ্বংসাত্মক হয়ে পড়ে। উভয় প্রকারের প্রবণতার ভারসাম্যপূর্ণ সংরক্ষণ ও উন্নয়নই মানুষকে পরিপূর্ণ মানবতা দান করে। এজন্য ন্যূনতম তিনটি বিষয়ের প্রয়োজন:
প্রথমত: সমাজের মানুষদের পারস্পরিক দেখাসাক্ষাত কথাবার্তা ও সুসম্পর্ক ( interaction)। এর অবিদ্যমানতা মানুষকে ক্রমান্বয়ে স্বার্থপর করে তোলে। সমাজের মানুষদের থেকে লজ্জা বোধ থাকে না এবং সমাজের কাছে নিন্দিত বা নন্দিত হওয়ার অনুভূতি চলে যায়। সমাজের মানুষদের প্রতি দরদ ও ভালবাসা তৈরি হয় না। তাদের সাথে দূরের শত্রু বা অপরিচিত লোকের মত আচরণ করা সম্ভব হয়।
দ্বিতীয়ত: ভয় ও লোভ। প্রতিশোধের স্পৃহা সম্পদ, ক্ষমতা বা শক্তির লোভ ও অনুরূপ পশুপ্রবৃত্তি মানুষকে দ্রুত ও নগদ স্বার্থ হাসিলের জন্য দুর্নীতি ও হিংস্রতায় উদ্বুদ্ধ করে। ভয় ও লোভই তার “নগদ” প্রাপ্তির স্পৃহা নিয়ন্ত্রণ করে। এ ভয় ও লোভের তিনটি পর্যায়: (১) নিজের বিবেকের কাছে নন্দিত বা নিন্দিত হওয়ার ভয় ও লোভ। (২) সমাজ, রাষ্ট্র বা আইনের চোখে নিন্দিত, নন্দিত, তিরস্কৃত, পুরস্কৃত বা শাস্তিপ্রাপ্ত হওয়ার আশা ও ভয়। (৩) আল্লাহর কাছে নিন্দিত, নন্দিত, তিরস্কৃত বা পুরস্কৃত হওয়ার আশা ও ভয়। এর মধ্যে তৃতীয় পর্যায়টিই প্রকৃতভাবে দুর্নীতি ও হিংস্রতা বন্ধ করতে পারে।
খুতবাতুল ইসলাম pdf download
কারণ, প্রত্যেকের পক্ষেই নিজের বিবেককে প্রবোধ দেওয়া সম্ভব। সকলেই জানে সমাজ, রাষ্ট্র বা আইনকে ফাঁকি দেওয়া যায় এবং এগুলির কাছে কোনো সঠিক মূল্যায়ন আশা করা যায় না। এজন্য প্রকৃত সততা তৈরি করতে আল্লাহর ভয় ও লোভ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহ সকল কষ্টের পরিপূর্ণ পুরস্কার দিবেন এবং সকল অন্যায়ের শাস্তি দিবেন বলে অবচেতনের বিশ্বাস লাভের পর মানুষ যে কর্মটি আল্লাহর কাছে অন্যায় বলে নিশ্চিত জানতে পারে সে কাজ করতে পারে না এবং আল্লাহর দৃষ্টিতে ভাল বলে প্রমাণিত কাজটি কোনো জাগতিক পুরস্কার বা প্রশংসার আগ্রহ ছাড়াই, বরং সকল প্রতিকুলতা সত্ত্বেও করার চেষ্টা করে।
তৃতীয়ত: জ্ঞান। মানুষকে সৎ সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে তার মধ্যে সঠিক জ্ঞানের বিকাশ ঘটানো অতীব প্রয়োজন। অজ্ঞানতা ও বিকৃত জ্ঞান মানুষকে বিপথগামী করে। পক্ষান্তরে, ব্যক্তি নিজের, পরিবারের, সমাজের, রাষ্টের ও বিশ্বের প্রতি নিজের দায়িত্ব, করণীয়, পুরস্কার, শাস্তি ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারলে তার এ জ্ঞান তার বিবেককে পরিচালিত করতে পারে।
এ তিনটি বিষয় সৃষ্টি, সংরক্ষণ ও শক্তিশালী করার জন্য সালাতুল জুমুআ ও খুতবা একটি অতুলনীয় ব্যবস্থা। অন্য কোনো ধর্মে এরূপ বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা আছে বলে আমরা জানতে পারি নি। ইহূদী ও খৃস্টধর্মে শনি ও রবিবার সাপ্তাহিক দিবস হিসাবে থাকলেও গীর্জা বা সিনাগগে গমন এবং সালাতে অংশ গ্রহণ ও খুতবা শ্রবণের বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে এ সকল সমাজের অধিকাংশ মানুষই কখনোই বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া চার্চে গমন করেন না। পক্ষান্তরে ইসলামে শুক্রবারে সালাতুল জুমুআয় শরীক হওয়া এবং খুতবা শ্রবণ করাকে বাধ্যতামূলক ফরয ইবাদত বলে গণ্য করা হয়েছে।
খুতবাতুল ইসলাম বই
যে কোনো সমাজে যে কোনো পর্যায়ের শিক্ষিত, অশিক্ষিত ভাল বা মন্দ মুসলিম পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতে আদায়ের পাশাপাশি শুক্রবারের সালাতুল জুমুআ ও খুতবাতুল জুমুআ সুন্নাত নিয়মে আদায় করতে পারলে এ তিনটি বিষয়ই অর্জন করতে পারেন। তার মধ্যে সমাজের সকলের সাথে পরিচয় ও হৃদ্যতা তৈরি হয়। তার মধ্যে আল্লাহর শাস্তির ভয় ও তাঁর পুরস্কারের আশা শক্তিশালী হয়। তিনি নিজ, পরিবার ও সমাজের প্রতি তার দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি সীমিত হলেও কিছু প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। এতে অত্যন্ত সহজ ও প্রাকৃতিকভাবে তার মধ্যে স্বার্থপরতা, দুর্নীতি, প্রতিশোধস্পৃহা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের শক্তি তৈরি হয়।
বর্তমানে সমাজ থেকে দুর্নীতি, সহিংসতা, এইডস ইত্যাদি প্রতিরোধ বা দূর করতে বহুমুখি প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা “স্বাভাবিক” ও সহজ পথ বাদ দিয়ে “অস্বাভাবিক” ও বক্রপথে আমাদের প্রচেষ্টা সফল করার চেষ্টা করছি। আমরা দুর্নীতি, এ্যসিড, যৌতুক, এইডস ইত্যাদির বিরুদ্ধে এবং মানবাধিকার বা অনুরূপ বিষয়াদির পক্ষে কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রচারপত্র, বিলবোর্ড, সেমিনার, টেলিভিশন প্রোগ্রাম ইত্যাদি করছি। অথচ এগুলির ফলাফল প্রায় শূন্য।