বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; শাইখ আলী জাবির আল ফাইফী লিখিত বই তিনিই আমার রব এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য—যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন; আর আচ্ছাদিত করেছেন অসংখ্য নিয়ামতরাজি দ্বারা। যাঁর অশেষ রহমত ও অবারিত করুণায় সিক্ত হয়ে আজ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের মাঝে নির্বাচিত হয়ে আমরা মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করতে পেরেছি অথবা তাঁরই করুণায় সিক্ত হয়ে আমরা মুসলিম হতে পেরেছি। যিনি আমাদের বানিয়েছেন তাঁর নির্বাচিত দলের অন্তর্ভুক্ত, তাওফীক দিয়েছেন তাঁর প্রিয়জন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসারী হওয়ার।
যিনি পৃথিবীতে আমাদের চলার পথ সহজ করে দিয়েছেন। যিনি আমাদেরকে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পথপ্রদর্শন করে গেছেন। আমরা গুনাহ ও অবাধ্যতার পথ বেছে নিয়ে বারংবার অনিবার্য আযাবের উপযুক্ত হলেও যিনি বারবার তাঁর ক্ষমা দিয়ে আমাদের ঘিরে রেখেছেন। যিনি … যিনি… এভাবে যতই বলতে থাকি শেষ হবে না!
আমাদের প্রত্যেকেরই নাম আছে, যাকে আরবীতে বলা হয় ‘ইসম’। আর নাম দ্বারা উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে বলা হয় ‘মুসাম্মা’। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তাঁর অনেকগুলো নাম রয়েছে। এ নামগুলোকে বলা হয় ‘আসমাউল হুসনা’ তথা সুন্দরতম নামসমূহ। দুনিয়ার দিক থেকে আসুন চিন্তা করি।
আপনার কোনো বন্ধুর যদি অনেকগুলো নাম থাকে। আর প্রতিটি নামই আপনার মুখস্থ থাকে, তাকে আপনি অবস্থা অনুসারে প্রতিবারই ভিন্ন নামে ডাকেন, তাহলে সে আপনাকে কতটা কাছের মনে করবে? তার কাছে মনে হবে, আপনি তাকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। যে-কারণে তার সবগুলো নাম আপনি মনে রেখেছেন।
তাহলে যে-আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা, যে আল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জবানে আমাদের জানালেন— নিশ্চয় আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম আছে, একশটি থেকে একটি কম। যে এগুলোকে পূর্ণ ঈমানসহ অনুধাবন করল সে জান্নাতে প্রবেশ করল।
এ হাদীসে আল্লাহর নিরানব্বইটি নামই আয়ত্ত করার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। এখন এ আয়ত্তের ধরন কেমন হবে? এর উত্তরে ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন—এটি তিন ভাবে হবে।
এক. এ শব্দগুলো জানা
দুই. এগুলোর মর্মার্থ জানতে পারা
তিন. এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে চাওয়া এবং এগুলোর দাবি অনুসারে আমল করা
আমরা সবাই আল্লাহর একাত্মবাদে বিশ্বাস করি, আমরা জানি, তিনিই আমাদের রব। তিনি গোটা সৃষ্টিকুলের স্রষ্টা ও মালিক। তিনি সকল রাজত্বের মালিক, সমগ্র বিশ্বের পরিচালক। তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। তিনিই আমাদের রব। এ বিশ্বাস রবকে স্বীকৃতি প্রদানের বিশ্বাস। এর নাম তাওহীদুর রবুবিয়্যাহ বা রবের একত্ববাদ।
এই যে আমরা তাঁকে সমগ্র বিশ্বের স্রষ্টা, রিযিকদাতা, পরিচালক মেনে নিলাম-এর অপরিহার্য দাবি এই যে, ইবাদতও তাঁর জন্যই হতে হবে। শারীয়াতসম্মত উপায়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য যত আমল-তা একমাত্র তাঁর জন্যই নিবেদিত হতে হবে। যুগে যুগে রাসূলগণ এ তাওহীদেরই দাওয়াত দিয়েছেন। সকল সৃষ্টি যেন তাঁর ইবাদতের দিকে ফিরে আসে সেটাই তিনি চেয়েছেন। এর নাম তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ বা ইবাদতের একত্ববাদ।
আল্লাহর সুন্দরতম গুণবাচক নামসমূহ আছে। এ নামগুলোর প্রত্যেকটি তাঁর গুণকে শামিল করে থাকে। যেমন, আল-আলীম নামটি ইলমের গুণ বোঝায়। আল-হাকীম নামটি হিকমাহর গুণ বোঝায়। এ নামগুলো কোনো সৃষ্টির গুণাবলির সদৃশ নয়, শুধু এক আল্লাহর জন্যই সাব্যস্ত এ সুন্দরতম নামসমূহ। এ বিশ্বাস ‘তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত। আল্লাহর একাত্মবাদে বিশ্বাস করতে হলে এ তিনটি বিশ্বাস অবশ্যই আমাদের ধারণ করতে হবে। সর্বশেষ যে-তাওহীদের কথা বলা হলো, তারই একটা প্রতিফলন এ ছোট বইটিতে পাওয়া যাবে ইন শা আল্লাহ। ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহর উক্তি প্রণিধানযোগ্য—
“যে-ব্যক্তির হৃদয়ে সামান্য পরিমাণ জীবনীশক্তি আছে অথবা মহান রবের প্রতি সামান্য ভালোবাসা আছে অথবা মহান রবের সাক্ষাতের সামান্য পরিমাণ হলেও ইচ্ছা আছে, তার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, সবচেয়ে বেশি প্রচেষ্টা যেন হয়ে থাকে এ অধ্যায় জানা, গভীরভাবে অনুধাবন করা, এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া ও এগুলো থেকে নতুন কিছু আবিষ্কারের চেষ্টায় রত থাকা। বিশুদ্ধ হৃদয়, প্রশান্ত আত্মার ব্যক্তিগণ এ বিষয়ে জানার পরিবর্তে অন্য কোনো বিষয় জানার প্রতি অধিক আগ্রহী হবে—সেটা ভাবাই যায় না। এ বিষয়ে জানলে তারা যতটা খুশি হবে ততটা খুশি অন্য কোনো কিছু অর্জিত হলেও হবে না। যখন তাদের অন্তরে এ নামগুলোর আলোকচ্ছটা পড়বে তখন অন্য সব আলোর বিচ্ছুরণ সামান্যই মনে হবে।’
আল্লাহর নামগুলো জানা ও সেগুলোর মর্মার্থ উদ্ঘাটনের প্রতি বরাবরই আমার সীমাহীন আগ্রহ ছিল—আলহামদু লিল্লাহ। একদিন অনলাইন থেকে কয়েকটি বই ডাউনলোড করলাম, সেগুলোর মাঝে এ বইটিও ছিল। নামটি দেখেই বেশ পছন্দ হলো। বেশ দ্রুত পড়ে ফেললাম বইটি। পড়ার পরে হঠাৎ অনুবাদ করার চিন্তা মাথায় এলো। সাহস করে আল্লাহর সাহায্য নিয়ে অনুবাদ শুরু করে দিলাম। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি। বইটি পড়তে গিয়ে ক্ষণে ক্ষণে শিহরিত হয়েছি। কখনও এ বই আমাকে গভীরভাবে ভাবতে শিখিয়েছে, সৃষ্টিকর্তার প্রতি আরও অভিমুখী হতে এ বইটি আমাকে উৎসাহী করেছে। সকল প্রশংসা এক আল্লাহর।
বইটির পরতে পরতে লুকিয়ে আছে বিস্ময়। বইটি আপনাকে আল্লাহর গুণবাচক সুন্দরতম দশটি নামের সাথে পরিচিত করবে। নামগুলোর সাথে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের গভীর সম্পর্ক তুলে ধরবে। বইটি ভাবনার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে সহায়তা করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমরা যারা জীবনে ক্ষণে ক্ষণে আল্লাহকে ভুলে যাই, তাদেরকে আবার আল্লাহর প্রতি গভীর অনুরাগে উদ্বেল করে তুলবে এ বই।
প্রিয় পাঠক, আমি এক নগণ্য অনুবাদক। এ বই দেখে অনেকে আমাকে লেখক ভেবে বসছেন। বিষয়টি তা নয়। এটিই আমার প্রথম প্রকাশিত অনূদিত গ্রন্থ। এ বইটি আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে। আশা করি, পাঠকের হৃদয়ও স্পর্শ করবে, ভাবনার সাগরে ঢেউ তুলবে। আমার অনুরোধ, এ বইটি যেন আল্লাহকে জানার, চেনার শেষ বই না হয় আমাদের। আমরা যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাকে চেনার জন্য কুরআন-হাদীসের শরণাপন্ন হই। আসুন, সহীহ মুসলিমের (২৬৬) একটি হাদীস পড়ে নিই—সুহাইব রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“যখন জান্নাতবাসী জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা বলবেন, ‘তোমরা কি এমন কিছু চাও—যা আমি অতিরিক্ত দেবো?’ জান্নাতীগণ বলবে, ‘আপনি কি আমাদের চেহারা শুভ্র করেননি? আমাদেরকে কি আপনি জান্নাতে প্রবেশ করাননি? আমাদেরকে কি আপনি জাহান্নাম থেকে রক্ষা করেননি?” এ কথার পর আল্লাহ তাঁর নিজের ওপর থেকে পর্দা সরিয়ে দেবেন। তারা (জান্নাতীগণ) তাদের রবকে দেখার মতো এত প্রিয় আর কিছুই পাবে না।’
আমি স্বপ্ন দেখি, এ বইয়ের লেখক, পাঠক, প্রকাশক, সম্পাদকসহ সকল ঈমানদার ব্যক্তি যখন হাত ধরাধরি করে জান্নাতে প্রবেশ করব তখন সেই রবকে দেখতে পাবো। এরকম কোনো বইয়ে যতটুকু জেনেছি ততটুকু নয়, সরাসরি দেখে আমরা চোখ জুড়াব। আমাদের হৃদয় এক অপার্থিব আনন্দে ভরে যাবে। আমরা যেন দুনিয়ার এ যাত্রায় সফল হয়ে সেই স্বর্গসুখ লাভ করতে পারি সেজন্য আল্লাহর কাছে তাওফীক চাই। আর অনুবাদক হিসেবে আমি যেন এ স্বপ্নটি বাস্তবায়ন করতে পারি—সেজন্য সবার কাছে দুআ চাই।
সবশেষে ধন্যবাদ জানাই আরিফ আজাদ ভাইকে; যিনি তার মূল্যবান সময় ব্যয় করে বইটি সম্পাদনা করে দিয়েছেন এবং বইয়ে থাকা আমার ভাষাগত দুর্বলতা পরিচর্যা করে শুদ্ধ করেছেন। আরও ধন্যবাদ জানাই সমকালীনের পুরো টিমকে যারা আমার এ সামান্য অনুবাদকর্ম তাদের প্রকাশনী থেকে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বারাকাল্লাহু ফী হায়াতিহিম ওয়া নাফাআ বিহিমুল উম্মাহ।