বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; ড. আইদ আল কারণী লিখিত বই লা তাহযান হতাশ হবেন না এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
সকল প্রশংসা সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ তা’য়ালারই প্রাপ্য। রাসূলুল্লাহ তাঁর পরিবার-পরিজন ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের উপর অবিরত সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক।
আমার একান্ত কামনা এই যে, পাঠকবৃন্দ এ পুস্তক হতে উপকৃত হবেন। সম্পূর্ণ পুস্তক পাঠ করার পূর্বেই শুধুমাত্র ভাসা ভাসা নজর বুলিয়েই পাঠক বইটি কী ধরনের তা বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারবেন। কিন্তু ওহী হতে সঠিক যুক্তি ও নীতি দ্বারা যেন সে বিচার করা হয়। এ কথাও মনে রাখা উচিত যে, কোনো বিষয়ে না জেনে না শুনেই মন্তব্য করা অমার্জনীয় পাপ। তাই নিম্নে আমি এ পুস্তকের একটি রূপরেখা উপস্থাপন করছি। (যাতে করে এ পুস্তকটি সম্পর্কে আপনাদের একটি প্রাথমিক ধারণা জন্মে। -অনুবাদক)।
যিনি দুঃখ-বেদনার মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করছেন বা যিনি সঙ্কটাপন্ন, যার ফলে দুঃখিত ও বিষণ্ণ এবং এমন অবস্থার কারণে বিনিদ্র রজনী যাপন করছেন এ পুস্তকটি আমি তার জন্য লিখেছি। রোগাক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য কুরআন, সুন্নাহ, মর্মভেদী বাস্তব ঘটনা, কাব্য, শিক্ষাপ্রদ কল্পকাহিনী ও সত্যগল্প ইত্যাদি থেকে ওষুধের মাত্রা সংগ্রহ করে এ পুস্তকের পাতাগুলো অলংকৃত করেছি।
এ পুস্তক বলে : আনন্দ কর ও সুখী হও; আশাবাদী হও এবং সুখে থাকো। প্রকৃতপক্ষে এ বইটি এ কথাও বলে- যেভাবে জীবন যাপন করা উচিত সেভাবে জীবন যাপন কর-অর্থাৎ সজীবভাবে, সুখে ও ফলপ্রসূভাবে। এ পুস্তক এমনসব ভুলসমূহ নির্ণয় করে যেগুলো সঠিক নির্দেশনা অনুসরণ না করাতে আমরা ভুলে যেতে বাধ্য হয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনা ও কাজ-কর্মে করে ফেলি। যে ভুলগুলো সেসব সহজ-সরল ও সাধারণ নীতির বিপরীত যে নীতিগুলো দ্বারা আমরা মানবজাতি পরিচালিত।
সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ যে বাস্তব জীবন পূর্বেই নির্ধারণ করে রেখেছেন সে জীবনের বিপরীত বা বিরোধী পথে অটল থাকতে এ পুস্তক আপনাকে প্রতিরোধ করে এবং আপনাকে সুরক্ষিত দূর্গের বাহির থেকে বা বাহিরে আসতে আহ্বান করে না, বরং ভিতর থেকে বা ভিতরে আসতে আহ্বান করে, এটা আপনাকে এমন স্থান থেকে আহ্বান করে যা আপনার জানাই আছে। এটা আপনাকে বলে যে, আপনার প্রতিভাকে আপনার বিশ্বাস করা উচিত। আপনার প্রতিভাকে উন্নত করা আপনার কর্তব্য; আপনার উচিত একটি ইতিবাচক মনোভাবের দিকে মনোনিবেশ করে জীবনের সমস্যা ও উত্থান-পতনের কথা ভুলে থাকা। কেননা, ইতিবাচক মনোভাব আশাপ্রদ ও সৌভাগ্যের দিকে নিয়ে যায়।
এখন আমি এ বইটি সম্পর্কে কতিপয় বিচার্য বিষয়ের পরিষ্কার বর্ণনা দিতে চাই-
১. এ পুস্তকের অধিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈশিষ্ট্য হল এই যে, এটা আল্লাহর দয়া ও ক্ষমার কথা, আল্লাহর উপর অকৃত্রিম বিশ্বাস স্থাপনের কথা, তকদীরে বিশ্বাস, বর্তমানকালের জীবন-যাপনের স্বরূপ এবং আল্লাহর অগণিত করুণার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
২. এ পুস্তকের মতামত ও চিকিৎসা পদ্ধতি দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা, দুঃখ-বেদনা, ব্যর্থ মনোভাব এবং হতাশা দূরীকরণার্থে আপ্রাণ চেষ্টা করে।
৩. কুরআনের আয়াত, রাসূলের বাণী (তাঁর উপর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক), গল্প, শিক্ষামূলক রূপক কাহিনী, কবিতা এবং বিজ্ঞজনদের প্রবাদ-প্রবচনাদি থেকে যা কিছু আমি এ গ্রন্থের আলোচ্য বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ মনে করেছি আমি তাই সংগ্রহ করেছি। এ পুস্তক শুধুমাত্র হিতোপদেশ, কষ্ট-কল্পনা বা রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি আমন্ত্রণ নয়; বরং এ বইটি আপনার সুখের দিকে এগিয়ে নেয়ার এক আন্তরিক আহ্বান।
৪. এ গ্রন্থ শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্যই নয়; অধিকন্তু, এটা ধৰ্ম, বর্ণ-নির্বিশেষে সকল পাঠকের জন্যই উপযোগী। এ পুস্তকটি লিখার সময় আমি প্রত্যেকের সাধারণ আবেগ ও অনুভূতির কথা বিবেচনা করেছি। তা সত্ত্বেও আমি এ পুস্তকটি সকলের সহজাত সত্য ধর্মের উপর ভিত্তি করেই লিখেছি (হয়তোবা আমরা জনসাধারণ এই স্বভাবজাত সত্যধর্ম হতে বিচ্যুত হয়ে গেছি অথবা হয়নি)।
৫. আপনি এ পুস্তকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের লেখক ও দার্শনিকদের প্রবাদ-প্রবচন পাবেন। এ কারণে আমি নিজেকে অপরাধী মনে করি না; কেননা, প্রজ্ঞা প্রতিটি বিশ্বাসীরই কাম্য বস্তু; যেখানেই সে তা পাক না কেন সে. এর খুবই যোগ্য।
৬. কোনোরূপ বাধা-বিপত্তি ছাড়াই গভীর মনোযোগের সাথে পাঠ করার জন্য বইটিতে আমি কোন পাদটীকা সংযোজন করিনি; এতে করে বইটি পাঠকের জন্য অধিকতর সহজ ও সাবলীল হয়েছে। উদ্ধৃতির উৎস পুস্তকের মূল পাঠের ভিতরেই উল্লেখ করা হয়েছে।
৭. এই বিশেষ পুস্তকের জন্য অধিকতর ভালো মনে করে আমার পূর্বসুরীদের তথা কয়েক শতাব্দী পূর্বের ইসলামী লিখকদের অনুকরণ করে উৎসের আলোচ্য অংশের উদ্ধৃতি দিয়েছি এবং অন্যান্য সময়ে উদ্ধৃতাংশের মূল কথাকে সংক্ষেপে উল্লেখ করেছি।
৮. এ গ্রন্থটিকে আমি অধ্যায় অনুসারে বিন্যাস করিনি; বরঞ্চ পূর্বাপর বিষয়ের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত নাও হতে পারে এমন আলোচনার অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে পুস্তকের আলোচনাকে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বর্ণনা করেছি। এ গ্রন্থটির পঠনকে অধিকতর উপভোগ্য করে তোলার জন্য মাঝে মাঝে আমি পূর্ববর্তী কোনো এক আলোচ্য বিষয়ে ফিরে গিয়েছি। এভাবে আমি এক বিষয় হতে অন্য বিষয়ে দ্রুত প্রবেশ করেছি।
৯. আমি আয়াত নম্বর উল্লেখ করেছি, তবে হাদীসের উৎস উল্লেখ করিনি। কোনো হাদীস দুর্বল হলে আমি তা নির্দেশ করে দিয়েছি। হাদীসটি নির্ভরযোগ্য বা হাসান হলে হয়তো তা আমি উল্লেখ করেছি নয়তো নিরব থেকেছি। এ সবকিছু আমি সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যেই করেছি।
১০. প্রিয় পাঠকবৃন্দ! লক্ষ্য করবেন যে, এ গ্রন্থের সর্বাংশে বিভিন্নভাবে কতিপয় উদ্দেশ্য ও আলোচনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। তা আমি ইচ্ছে করেই করেছি, যাতে করে কোনো প্রদত্ত উদ্দেশ্য পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে পাঠকের মনে আপনা-আপনিই দৃঢ়বদ্ধ হয়ে যায়। যে-ই ভেবে দেখে যে, কুরআনে কতই না পুনরাবৃত্তিমূলক বিষয়বস্তু পাওয়া যায়, তারই এ পদ্ধতি অনুসরণের উপকারিতা অনুধাবন করার কথা।
এ গ্রন্থটি পড়ার সময়ে আপনাকে এ দশটি কথা স্মরণ রাখতে হবে। যা হোক, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, পাঠক পাঠিকাগণ সঠিক বিচার করবেন এবং এটাও আশা করি যে, সত্য ও সঠিক জ্ঞানের দিকে পাঠকের চিন্তা-চেতনা ধাবিত হবে।
পরিশেষে বলতে চাই যে, এ পুস্তকটি বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ের জন্য রচিত হয়নি; বরং এটা তার জন্য যে সুখী-সমৃদ্ধি জীবনযাপন করতে আগ্রহী।