বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে ইসমে আজম, ইসমে আজম দোয়া বাংলা উচ্চারণ সহ এবং ইসমে আজম সহ দোয়া করার নিয়ম।
Table of Contents
Toggleইসমে আজম কি এবং ইসমে আজম দোয়া কি
ইসম অর্থ হলো নাম আর আজম অর্থ হলো মহত্তর, সুমহান। ইসমে আজম হলো মহান আল্লাহর ঐ সুমহান নাম, যে নামে ডেকে দোয়া করলে তাৎক্ষনিকভাবে দোয়া কবুল হয়। আর দুআ বলতে শুধু সাধারণ দুআ সমূহই নয় বরং অসাধ্য ও কঠিন পর্যায়ের দুআ সমূহ যেমন আকাশে উড়া, পানিতে চলা বা মুহুর্তে এক স্থান থেকে দূরবর্তী স্থানে চলে যাওয়া, দূরারোগ্য ব্যাধি নিরাময় হওয়া ইত্যাদি পর্যায়ের দুআ সমূহও এর অন্তর্ভুক্ত।
ইসমে আজম দোয়া হলো ঐ দোয়া যাতে আল্লাহর ইসমে আজম বা সুমহান নাম উল্লেখ করা হয়। এক কথায় আল্লাহর ইসমে আজম বা সুমহান নাম ধরে ডেকে দোয়া করলে সেই দোয়াই হচ্ছে ইসমে আজম দোয়া।
ইসমে আজম কয়টি
ইসমে-আজম একটি নাকি অনেকগুলি এবং কোনটি বা কোনগুলি তা আল্লাহই ভালো জানেন। কুরআন বা হাদিসে এটা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। কুরআন এবং হাদিসে ইসমে আজম সম্পর্কে অনেকগুলি বর্ণনা এসেছে। যার থেকে বিশেষ কিছু বর্ণনা উল্লেখ করছি।
ইসমে আজম
১. আল ইলাহ
হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- ইসমে আজম এই দুই আয়াতের মধ্যে রয়েছে-
১. ওয়া ইলাহুকুম ইলাহুন ওয়াহিদ লা ইলা ইল্লা হুয়ার রহমানুর রহীম। (সূরা বাকারা: ১৬৩)
অর্থ: আর তোমাদের মা’বূদ একমাত্র আল্লাহ। তিনি ছাড়া অন্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি দয়াময়, অতি দয়ালু।
২. আলিফ লাম মিম আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ূম। (সূরা আল ইমরান: ১-২)
অর্থ: আলিফ-লাম-মীম। তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া অন্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী।
জামে তিরমিযী, দুআ অধ্যায়, হাদীস: ৩৪৭৮।
২. আল হাইয়্যুল কাইয়্যুম
ইমাম ইবনে মাজাহ এবং হাকীম হযরত আবু উমামা (রা) থেকে মারফুরুপে বর্ণনা করেছেন- ইসমে আযম তিনটি সূরার মধ্যে রয়েছে। সূরা বাকারা, সূরা আল ইমরান এবং সূরা ত্বহার মধ্যে।
সহীহ হাকীম, দুআ অধ্যায়, হাদীস: ১৮৬৬ । সুনানে ইবনে মাজাহ, দুআ অধ্যায়, হাদীস: ৩৮৫৬।
এই হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হযরত কাসিম (রহ) বলেন, আমি কুরআনের এই তিন সূরায় ইসমে আজম তালাশ করেছি, তখন আমি অবগতি লাভ করলাম যে, তা হলো- আল হাইয়্যুল কাইয়্যুম।
৩. আল মালিকুল মুলক
ইমাম তাবরানী আল মু’জামুল কাবীরে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন-
আল্লাহ তাআলার ইসমে আযম যার মাধ্যমে দুআ কবুল হয় তা সূরা আল ইমরানের এই আয়াতে রয়েছে-
উচ্চারণ: কুল্লিলা-হুম্মা মা-লিকাল মুলকি তু’তিল মুলকা মান তাশাউ ওয়া তানঝি‘উল মুলকা মিম্মান তাশাউ ওয়াতু ইঝঝুমান তাশাউ ওয়া তুযিল্লুমান তাশাউ বিইয়াদিকাল খাইরু; ইন্নাকা ‘আলা-কুল্লি শাইয়িন কাদীর।
অর্থ: বল, হে আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে সকল কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান ।
উচ্চারণ: তূলিজুল লাল্লাইলা ফিন্নাহা-রি ওয়াতূলিজুন্নাহা-রা ফিল্লাইলি ওয়াতুখরিজুল হাইইয়া মিনাল মাইয়িতি ওয়াতুখরিজুল মাইয়িতা মিনাল হাইয়ি ওয়াতারঝুকুমান তাশাউ বিগাইরি হিছা-ব।
অর্থ: তুমি রাতকে দিনের ভেতরে প্রবেশ করাও এবং দিনকে রাতের ভেতরে প্রবেশ করাও। আর তুমিই জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করে আন এবং মৃতকে জীবিতের ভেতর থেকে বের কর। আর তুমি যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান কর। (সূরা আল ইমরান: ২৬- ২৭)
তাবারানী কাবীর, হাদীস: ১২৭৯২।
৪. যাল জালালি ওয়াল ইকরাম
তিরমিযীতে হযরত মুয়ায (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা) জনৈক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, “ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম- হে পরাক্রমশালী ও মহা সম্মানের অধিকারী।” তিনি বললেন, তোমার দুআ কবুল করা হবে। অতএব, তুমি প্রার্থনা কর ।
জামে তিরমিযী, দুআ অধ্যায়, হাদীস: ৩৫২৪। সহিহ হাকীম, দুআ অধ্যায়, হাদীস: ১৮৩৭।
আল্লামা ইবনে জারির (রহ) সূরা নামল এর তাফসীরে হযরত মুজাহিদ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন- ঐ নাম যার দ্বারা দুআ করলে কবুল করা হয়, তা হলো- ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম।
ইসমে আজম দোয়া কয়টি
ইসমে-আজম দোয়া কয়টি তা সুস্পষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়। কুরআন এবং হাদিসে বেশ কয়েকটি ইসমে আজম সম্বলিত দোয়া পাওয়া যায়। যার থেকে কয়েকটি দোয়া উল্লেখ করছি। এছাড়াও আপনি ইসমে আজম বা সুমহান নামে আল্লাহকে ডেকে তার কাছে আপনার নিজের ভাষায় দোয়া করতে পারেন। সেটাও যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।
ইসমে আজম দোয়া সমূহ
দোয়া নং ১
আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে হিব্বান এবং হাকীম হযরত বুরাইদা (রাঃ) থেকে হাদিস বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) এক ব্যক্তিকে এই দুআ করতে শুনলেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্নি আশহাদু আন্নাকা আংতাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আংতাল আহাদুস সামাদুল্লাজি লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়া লাম ইকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। কারণ আমি সুদৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করি যে, তুমিই আল্লাহ। তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তুমি এক, অমুখাপেক্ষী। যার কোনো সন্তান নেই, তিনিও কারো সন্তান নন এবং তার সমকক্ষ কেউ নেই।
তার এই দুআ শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করলেন-
এই ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার ঐ নামের মাধ্যমে দুআ করেছে, যার উছিলায় কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা দিয়ে থাকেন আর কোন দুআ করলে তা কবুল করেন।
সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, হাদীস: ১৪৯৩। জামে তিরমিযী, দুআ অধ্যায়, হাদীস: ৩৪৭৫ ।
আবু দাউদের শব্দ- তুমি আল্লাহ তাআলার ইসমে আযমের দ্বারা দুআ করেছ।
দোয়া নং ২
ইমাম আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান এবং হাকীম হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি একবার রাসূলুল্লাহ (সা) এর মজলিসে বসা ছিলেন। এক ব্যক্তি নামায পড়লো এবং নামাযের পর দুআ করলো-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ وَحْدَكَ لاَ شَرِيكَ لك الْمَنَّانُ بَدِيعَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، يَا ذَا الْجَلالِ وَالإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আস-আলুকা বি-আন্না লাকাল হা’মদু লা-ইলা-হা ইল্লা-আনতা ওয়াহ’দাকা লা-শারিকা লাকাল মান্না-ন, ইয়া বাদিআ’স্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম। ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুম।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। কারণ তুমিই প্রশংসার যোগ্য। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমি হান্নান ও মান্নান (দয়ালু ও দাতা)। তুমিই আসমান-যমীনের স্রষ্টা। হে শ্রেষ্ঠত্ব ও বদান্যতার অধিকারী। হে চিরঞ্জীব। হে বিশ্ব জাহানের ব্যবস্থাপক।
এই দুআ শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, এই ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার ইসমে আযমের মাধ্যমে দুআ করেছে। যার দ্বারা দুআ করলে তা কবুল করা হয় এবং কিছু প্রার্থনা করলে তা প্রদান করা হয়।
জামে তিরমিযী, দুআ অধ্যায়, হাদীস: ৩৫৪৪। সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, হাদীস: ১৪৯৫।
দোয়া নং ৩
হযরত সাদ ইবনে ওয়াক্কাস (রা) বলেন, রাসুল সাঃ বলেন যে- আমি কি তোমাদেরকে আল্লাহর ইসমে আযম জানিয়ে দিব না? হযরত ইউনূস (আ) এর দুআই হলো ইসমে আযম। তখন এক ব্যক্তি বলল, এটা কি হযরত ইউনূস (আ) এর জন্যই নির্ধারিত। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তুমি কি শোন নাই এরপর আল্লাহ তাআলা কি বলেছেন-
এরপর তাকে আমি উদ্ধার করলাম দুঃখ-দুশ্চিন্তা হতে। এমনিভাবে আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি। (সূরা আম্বিয়া: ৮৮)
আল মুস্তাদরাক হাকীম, দুআ অধ্যায়, হাদিস: ১৮৬৫।
নাসাঈ ও হাকীম হযরত ফাযালা ইবনে উবাইদ (রাঃ) থেকে মারফুরুপে বর্ণনা করেন যে, হযরত ইউনুস (আ) মাছের পেটে এই দুআ করেন-
لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায যলিমীন। (সূরা আম্বিয়া: ৮৭)
অর্থ: তুমি ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত।
নাসাঈ আস সুনানুল কুবরা, কিতাব আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলি, হাদীস: ১০৪১৭। আল মুস্তাদরাক হাকিম, দুআ অধ্যায়, হাদীস: ১৮৬৩।
ইসমে আজম পড়ার নিয়ম ও সময়
উপরিউক্ত হাদিস থেকে আমরা জানতে পারলাম, যে কোন নেক প্রয়োজনে ইসমে আজম সহ আল্লাহর নিকটে দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। সালাতের সালাম ফিরানোর পর আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা সহকারে ইসমে আজম বা আল্লাহর সুমহান নাম ধরে ডেকে তার নিকটে দোয়া করতে হয়।