বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; মাওলানা তারিক জামিল লিখিত বই চোখে দেখা কবরের আযাব এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
সকল প্রশংসা আল্লাহর; যিনি ইবাদতের জন্য আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তার অনুগত বান্দাদের ঠিকানা জান্নাত এবং অবাধ্য বান্দাদের ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়েছেন। দরুদ ও সালাম শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি। যিনি জান্নাতের সুসংবাদদাতা এবং জাহান্নাম ও কবরের আযাব থেকে সতর্ককারী মুক্তির দূত হিসাবে প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহর প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করতে দুনিয়া বিমুখতার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ স্বরূপ নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। কুরআনে আল্লাহ তা’আলা মানব জাতিকে জাহান্নামের ভয় দেখিয়ে ইরশাদ করেন-
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। (সূরা তাহরীম-আয়াত : ৬)
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন- আমার সামনে জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হয়েছে। আমি আজকের মতো ভালো-মন্দ আর দেখিনি। আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে, তাহলে অবশ্যই তোমরা কম হাসতে এবং অনেক কাঁদতে। (মুসলিম শরীফ)
মুবাল্লিগে ইসলাম হযরত মাওলানা তারিক জামিলের বয়ান কৃত ঘটনাসমূহ যা সংকলন করেন আরসালান সাহেব। তারই বাংলায় অনুবাদ “চোখে দেখা কবরের আযাব” নামে আপনাদের খেদমতে পেশ করা যাচ্ছে।
বলা যায়, জাহান্নাম ও কবরের আযাব বিষয়ক জ্ঞান-তথ্য গ্রন্থ দুর্লভ। কুরআনের আয়াত, হাদীস, আসারে সাহাবা, তাবেঈন এবং পূর্বসূরী বহু আকাবিরে ওলামা, মাশায়েখ ও আল্লাহওয়ালা বুজুর্গদের নির্ভরযোগ্য চোখে দেখা বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে তিনি গ্রন্থটি সাজিয়েছেন। সবচেয়ে চমৎকার বিষয় হলো, প্রায় প্রতিটি আলোচনার ক্ষেত্রে তিনি কুরআনের আয়াত, হাদীস, পত্রিকা ও বই- এর রেফারেন্স দিয়েছেন । তাই গ্রন্থটির গ্রহণযোগ্যতা এক অসাধারণ রূপ লাভ করেছে।
আশা করি, প্রিয় পাঠক তারিক জামিলের অন্যান্য গ্রন্থটির মত এই গ্রন্থটিও পড়ে উপকৃত হবেন এবং জাহান্নামের ভয় মনে ঢেলে হেদায়েতের পথে পরিচালিত হতে সহায়ক হবেন, ইনশাআল্লাহ! মহান স্রষ্টার কাছে আবেদন, বান্দার এই ক্ষুদ্র শ্রমকে কবুল ও মঞ্জুর করে দ্বীন ও দুনিয়ার সফলতা দান করেন। আমীন।
তেরশো বছর পরেও দুই সাহাবীর তাজা লাশ অক্ষত পাওয়া গেল। সালমান পার্ক একটি প্রাচীন জনপদ। বাগদাদ থেকে প্রায় ৪০ (চল্লিশ) মাইল দূরে অবস্থিত। বর্তমানে শহর জীবনের কোন নিদর্শন বাকি নেই। স্থানটি এখন ৫০০ (পাঁচশত) পরিবারের একটি বস্তি মাত্র। বাগদাদ থেকে এখানে মোটর গাড়িই একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম ৷
বর্তমানে জরাজীর্ণ হলেও স্থানটির রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। বহু সংখ্যক সাহাবী এখানে গভর্ণর হিসাবে জীবন অতিবাহিত করেছেন। এর প্রাচীন নাম মাদায়েন। যুগ যুগ ধরে মাদায়েন ছিল পারস্য সম্রাটদের রাজধানী। টাইগ্রীসের পশ্চিম তীরে অবস্থানের কারণে প্রাকৃতিক দিক দিয়ে স্থানটা ছিল একটি কেল্লা সদৃশ। হযরত ফারুকে আজম (রা.)-এর খিলাফতকালে যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মামাতো ভাই সেনাপতি সাদ-বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.)-এর দ্বিগ্বিজয়ী লক্ষর এই টাইগ্রীসের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত বাহ রাশির শহরে এসে উপস্থিত হন, তখন তাঁদের সামনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল, কিভাবে টাইগ্রীস পাড়ি দিয়ে মাদায়েনে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানো যায়।
কেননা তাঁরা জানতে পারেন, সম্রাট ইয়াজদা পীরদের নির্দেশে টাইগ্রীসের সবগুলো সেতু গুড়িয়ে সীমান্ত রক্ষীরা মাদায়েনে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ইয়াজদাগীরদের বিশ্বাস ছিল টাইগ্রীসের বিশাল ঢেউ প্রাকৃতিক হয়ে মাদায়েনকে রক্ষা করবে। সত্যিই মুসলমান বাহিনী টাইগ্রীসের তীরে এসে কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে যান। তাঁরা যখন নদীর তীরে এসে পৌঁছেন তখন ছিল মধ্যরাত্রি। টাইগ্রীসে ফুটে উঠা তরংগমালা অতিক্রম করে নদী পার হওয়া ছিল অত্যন্ত বিপদজনক। কিন্তু ওপারের সম্রাট নওশিরওয়ারের শুভ্র মহল আর নয়নাভিরাম অট্টালিকাগুলো যেন তাদেরকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছিল। মরুচারী বেদুইনদের কাছে সে ছিল এক আশ্চর্য উপলব্ধি। কারণ, ইতিপূর্বে এমন কারুকার্য অট্টালিকা আর কখনও দেখেননি। তাঁরা বিস্ময়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন স্বপ্নপূরী মাদায়েনের দিকে।
মোটকথা, যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনার পর সেনাপতি হযরত সাদ বিন আবু অয়াক্কাস্ (রা.) ছালাতুল হাজত পড়ে প্রথমে আল্লাহ তা’য়ালার নিকট সাহায্য চেয়ে দোয়া করেন। তারপর পুরা লস্করসহ নেমে পড়েন তরঙ্গ সংকুল টাইগ্রীস নদীর বুকে। যত দূর দৃষ্টি যায় কেবল ঘোড়া আর ঘোড়াই দেখা যেতে লাগলো। তাঁদের পায়ের তলায় যেন পানির নাম গন্ধও ছিল না। তাঁরা পানির উপর দিয়ে এমনভাবে পরস্পর আলাপ করে চলছিলেন, যেন কস্কর বিছানো কঠিন মাটির উপর দিয়ে হেঁটে চলেছেন।
সেনাপতি সাদ (রা.)-এর পার্শ্বে ছিলেন নবী করীম (সা.)-এর খ্যাতনামা প্রিয় সাহাবী হযরত সালমান ফারসী (রা.)। তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন “আল্লাহ তা’য়ালার কসম, নিশ্চয় তিনি তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করবেন আর শত্রুকে করবেন পরাস্ত। তবে শর্ত হচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত লস্করের কেউ এমন কোন পাপ করবে না, যা তার পূণ্যকে ধ্বংস করে দিবে।
জবাবে সালমান ফারসী (রা.) বললেন- “আল্লাহ তা’য়ালার কসম! মোসলমানদের জন্য স্থলভাগের মত জলভাগকেও নিরাপদ করে দেয়া হয়েছে। শপথ সেই সত্তার, যাঁর কুদরতী হাতের মুঠোয় সালমানের প্রাণ, যেভাবে তাঁরা নদীতে নেমেছে ঠিক সেইভাবেই নিরাপদে অতিক্রম করবে। শেষ পর্যন্ত তাই হলো।
ইরানীরা ইতিপূর্বে এমন কাণ্ড আর কখনো দেখিনি। তারা ভয় ও বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় এবং দানব এসে গেছে বলে চিৎকার দিতে দিতে পালিয়ে যায়। আর এভাবেই কয়েক শতাব্দীর শাসানী সম্রাটদের ইতিহাস ঐতিহ্যের লীলাভূমি মাদায়েন মোসলমানদের পদানত হয়ে যায়। এখানে এখনও শাসানী সম্রাটদের কিছু স্মৃতি চিরকালের স্বাক্ষী হয়ে টিকে আছে। ঐগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে ন্যায়পরায়ন বাদশা সম্রাট নওশিরওয়ারের একটা রত্নখচিত সিংহাসন। এই স্মৃতিটিকে দেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে লোকজন এসে থাকেন। বর্তমানে সেখানে কয়েকটি কফিখানা রয়েছে। আর রয়েছে একটা শানদার কবরস্থান। ঐ কবরস্থানে একটা সুসিজ্জত গম্বুজের নিচে চির নিদ্রায় শুয়ে রয়েছেন প্রিয়নবী (সা.)-এর প্রিয়তম সাহাবী হযরত সালমান ফারসী (রা.)। হযরত সালমান ফারসী (রা.)-এর কবরের পাশেই রয়েছে আধুনিক স্থাপত্য শিল্পেগড়া আরো দুটি কবর।
এর একটি হচ্ছে, নবী করীম (সা.)-এর অন্যতম সার্বক্ষণিক সহচর হযরত যাবের বিন আব্দুল্লাহ আনসারী (রা.)-এর কবর। কবরদ্বয়ের কাছ হতে প্রবাহিত হচ্ছে। স্রোতস্বিনী দজলা নদী। শেষোক্ত সাহাবীদ্বয়ের কবর দু’টি নির্মিত হয়েছে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ইরাকের বাদশা প্রথম ফয়সালের যুগে। তখন তাদেরকে তাদের পূর্ব অবস্থান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়। কবর দু’টি সরানোর পূর্বে তাদের অবস্থান ছিল সালমান পার্ক থেকে দুই ফার্লং দূরে একটা অনাবাদি জায়গায়। কিন্তু একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকে তাদের পুরানো কবর থেকে সরিয়ে এনে সালমান পার্কের ঐতিহাসিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ সময়ে ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছুর দেখার এবং সাহাবীদ্বয়ের নূরানী চেহারা স্বচক্ষে দর্শন করার সৌভাগ্য অনেকেরই হয়। ঘটনার সাক্ষী হয়ে সেখানে উপস্থিত বাগদাদ, ইরাক ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে অনেকেই এখনও জীবিত আছেন। (২০১০ ইংরেজী সাল পর্যন্ত)।
সাহাবীদ্বয়ের এই কবর পরিবর্তনের ঘটনা বর্তমান বিশ্বে ইসলামের সত্যতার স্বপক্ষে একটি জীবন্ত প্রমাণ। ইসলামের সত্যতা মানে কি? ইসলামের সত্যতা মানে এক কথা কোরআন ও হাদিসে পাকের মধ্য যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তা সব অক্ষরে অক্ষরে সত্য। অল্প কথায় কোরআন ও হাদিসের মধ্যে কি আছে? কোরআন ও হাদিসের পাকের মধ্যে আছে যে, আল্লাহ তা’য়ালার যাত সিফাত সত্য, ক্বিয়ামত সত্য, পুনরুত্থান সত্য, পরকাল সত্য, মীযান সত্য, পুলসিরাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, জাহান্নামের সকল বর্ণিত আযাব ও কষ্ট সত্য, জান্নাত সত্য, জান্নাতের সকল আরাম আয়েশ ভোগ বিলাস, শান্তি সুখ, সফলতা সত্য।