Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

আবু বকর আস সিদ্দিক রাঃ pdf

আবু বকর আস সিদ্দিক রাঃ pdf Description

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; ড. আহমদ আলী লিখিত বই আবু বকর আস সিদ্দিক রাঃ এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।

আবূ বাকর (রা.) ছিলেন নাবী-রাসূলগণকে বাদ দিলে সমগ্র ইনসানী দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম আদর্শ মানুষ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় যেমন তিনি সমগ্র মুসলিম সমাজের নিকট উম্মাতের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তিরূপে পরিচিত ছিলেন, তেমনি তাঁর অন্তর্ধানের পরেও গোটা মুসলিম দুনিয়ায় তিনিই ছিলেন অবিসংবাদিত শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

রাসূলগণের পর আবূ বাকর (রা.) অপেক্ষা অন্য কোনো শ্রেষ্ঠতর মানুষের ওপর সূর্য উদিতও হয়নি এবং অস্তও যায়নি।”১ যে সকল উপাদান মানব চরিত্রকে সুন্দর, উন্নত, মহৎ ও পরিপূর্ণ করে তুলতে পারে, তার সবগুলোই আবূ বাকর (রা.)-এর মধ্যে বিদ্যমান ছিল। জাহিলী যুগেও তিনি পবিত্রতা, সততা, দানশীলতা, দয়া, সরলতা, ন্যায়পরায়ণতা ও আমানাতদারী প্রভৃতি গুণে বিভূষিত ছিলেন। যে সমাজে মদ্যপান, ব্যভিচার ও পাপাচার সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করেছিল, আবূ বাকর (রা.) সে সমাজের একজন প্রভাবশালী লোক হওয়া সত্ত্বেও এর সমস্ত কলুষ ও পঙ্কিলতা থেকে ছিলেন সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। বস্তুত এ গুণগুলো তাঁর মধ্যে স্বভাবগতভাবেই বিদ্যমান ছিল। উত্তরকালে কুর’আনের নৈতিক শিক্ষা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘনিষ্ঠ সাহচর্যের ফলে এ গুণগুলো তাঁর চরিত্রে অধিকতর চমকিত হয়ে ওঠে।

আল্লাহ তা’আলা যুগে যুগে বহু নাবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং তাঁদের মাধ্যমে মানব জাতিকে সতর্ক করেছেন। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই হচ্ছেন সর্বশেষ রাসূল। কিভাবে মানুষ তার জীবন গঠন করবে, কিভাবে জীবন সংগ্রামে সে জয়ী হবে- সব কিছুর পরিপূর্ণ আদর্শ দেখিয়ে দিয়ে তিনি অন্তর্হিত হলেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা যেন পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করে দিলেন, “হে মানুষ, এখানেই নুবুওয়াত ও রিসালাতের যুগ শেষ হলো। এবার তোমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াও।” মানব জাতির শক্তি ও সম্ভাবনার কাছে আল্লাহ তা’আলার এ এক উদাত্ত আহ্বান। নাবী-রাসূলগণের আশ্রয়ে থেকে মানুষ অন্যায় ও অসত্যের ওপর জয় লাভও করতে পারে; কিন্তু তাঁদের অবর্তমানেও তাঁদের শিক্ষার আলোকে মানুষ যে সত্য ও ন্যায়ের অপরূপ মহিমায় উদ্ভাসিত হতে পারে, আল্লাহ্ তা’আলা যেন এবার মানুষ থেকে এ পরীক্ষা নিতে চান।

আল্লাহ তা’আলার এ আহ্বান ও পরীক্ষায় আবূ বাকর (রা.) সাড়া দিলেন। তাঁকে এক কঠিন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হলো। আনন্দের বিষয় হলো, এ ভূমিকায় তিনি সম্মানের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন। মানবীয় আবেষ্টনীর মধ্যে থেকে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরাট ব্যক্তিত্বের অতি সার্থকভাবে রূপ দিয়ে গেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরাট ব্যক্তিত্বের নিকটে দাঁড়িয়ে আছেন বলে স্বভাবতই তিনি কিছুটা ম্লান হয়ে রয়েছেন; কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে বিচার করলে এ কথা সহজেই বোঝা যাবে যে, তাঁর ভূমিকাও কম গৌরবের নয়।

ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক দিয়েও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরে তিনিই হলেন সর্বপ্রথম উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি। তাঁকে ইসলামের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতা বলা যায়। বলাই বাহুল্য যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর তেইশ বছরের সাধনার মাধ্যমে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ জীবনাদর্শ স্থাপনের সাথে সাথে আরবের কঠিন জাহিলিয়্যাতের প্রাসাদ চুরমার করে তার ধ্বংসস্তূপের ওপর একটি উজ্জ্বল আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন; কিন্তু তাঁর ওফাতের সাথে সাথেই জাহিলিয়্যাতের প্রতিবিপ্লবী শক্তি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল। ইসলামের শিক্ষা, রীতি-নীতি ও আচার-অনুষ্ঠান- সবকিছুই একরূপ অন্তর্হিত হতে চলছিল। ইসলামকে অস্বীকার করে অনেকেই তাদের পূর্ব ধর্মে ফিরে গিয়েছিল। চারজন ডঙ নারী আবির্ভূত হয়ে সালাত, যাকাত, সাওম ও অন্যান্য অনুশাসন অস্বীকার করেছিল। বহু বেদুঈন গোত্র বিদ্রোহী হয়েছিল।

এক কথায় মুষ্টিমেয় কুরাইশ ও আনসার ব্যতীত সমগ্র আরবই ইসলামের গভীর বাইরে চলে গিয়েছিল। শত্রু-মিত্র সকলেরই এই বিশ্বাস জন্মেছিল যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জ্বালানো ইসলাম-প্রদীপ আর বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না। এই কঠিন সঙ্কট-মুহূর্তে আবূ বাকর (রা.) খিলাফাতের গুরু দায়িত্বভার মাথায় তুলে নিয়েছিলেন। অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সাহসিকতার সাথে তিনি এ সঙ্কটের এভাবে মুকাবিলা করলেন যে, বিদ্রোহ ও মিথ্যা নুবুওয়াতের দাবি বন্যার স্রোতের মুখে খড়কুটার মতো ভেসে গিয়েছিল। কুফরী ও শিরকের যে কালো মেঘ আরবের আকাশকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল, তা এমনভাবে উধাও হয়ে গেল যে, আর কখনো ফিরে আসতে পারেনি। শুধু তা-ই নয়; আরব বিদ্রোহীদের মস্তক চূর্ণ করে তিনি আরব দেশের বাইরেও অভিযান পরিচালনা করেন এবং যেরূপ সাহসিকতার সাথে বাইরের বড় বড় শক্তির যাবতীয় চ্যালেঞ্জ ও হুমকির সমুচিত জবাব দেন, এক কথায় রাষ্ট্রপরিচালনার ইতিহাসে তার দৃষ্টান্ত বিরল বলা চলে।

তাঁর খিলাফাত-কালে একদিকে মুসলিম সৈন্যগণ পারস্যের রাজধানী মাদায়িনের সিংহদ্বার পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল, অপরদিকে রোম- সাম্রাজ্যের অন্তর্গত শামের যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে বিরাট বিরাট রোমান বাহিনীকে পর্যদুস্ত করে রোম সম্রাটের সিংহাসন কাঁপিয়ে তুলেছিল। এভাবে তাঁর অক্লান্ত চেষ্টা ও বুদ্ধিমত্তার ফলেই অতি দ্রুত আবারো ইসলাম সমহিমায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। তাঁর তিরোধানের পর খালীফা ‘উমার (রা.) ইসলামের ভিত্তিভূমিকে আরো সুদৃঢ় ও সুবিস্তৃত করেন। আর এ ভিত্তিভূমির ওপরেই পরবর্তী খালীফাগণ বিশাল ইসলামী সালতানাত গড়ে তুললেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাতের পর আবূ বাকর ও ‘উমার (রা.)-এর মতো দু’জন মহান খালীফাকে আমরা যদি লাভ না করতাম, তবে ইসলামের কী দশা হতো, তা সত্যিই ভাববার বিষয়। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রা.) বলেন,

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাতের পর আমরা এমন এক কঠিন অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছিলাম যে, যদি আল্লাহ তা’আলা আবূ বাকর (রা.)-এর মাধ্যমে আমাদের ওপর অনুগ্রহ না করতেন, তা হলে আমরা প্রায় ধ্বংসই হয়ে যেতাম।

এ কথার প্রতিধ্বনি করেই বিখ্যাত জার্মান ঐতিহাসিক Von kremer আবূ বাকর ও ‘উমার (রা.) সম্বন্ধে বলেছেন, আবূ বাকর (রা.) ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিরন্তর সহচর ও আত্মনিবেদিত অকৃত্রিম বন্ধু। তাঁর সুখে-দুঃখে, বিপদাপদে, নির্জন ও সমাবেশে তিনিই তাঁর সাথে বেশি থাকতেন। ইসলাম কাবূল করার পর থেকেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাত পর্যন্ত দীর্ঘকাল তিনি তাঁর সাহায্য- সহযোগিতা, ইসলামের প্রচার ও কাফিরদের অত্যাচার-নিষ্পেষণ থেকে মুসলিমদের রক্ষা করার কাজে তাঁর সাথে প্রতিনিয়ত ব্যস্ত সময় কাটাতেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য তিনি নিজ জীবনেরও সামান্যতম পরোয়া করেননি। কাফিরদের সাথে প্রতিটি প্রত্যক্ষ সংগ্রামে তিনি তাঁর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন। এ কারণে তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয় ও আস্থাভাজন। মুসলিমদের যাবতীয় ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাথে একান্তে পরামর্শ করে চলতেন।

উমার (রা.) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসলিমদের ব্যাপারে রাতের বেলা আবূ বাকর (রা.)-এর সাথে আলাপ করতেন। আমিও তাঁর সাথে থাকতাম।”* বলতে গেলে আবূ বাকর (রা.) ছিলেন রাসূলুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দক্ষিণ হস্ত স্বরূপ। রাসূলুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রায় সকল কার্যক্রমে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাকর ও “উমার (রা.) প্রসঙ্গে বললেন, দু’জন ছাড়া আমার উপায় নেই। অর্থাৎ তাঁদের পরামর্শ ও সহযোগিতা আমার লাগবেই । কেননা এরা দু’জনই হলেন দীনের কান ও চক্ষুস্বরূপ।

Rate the Post

Rating Summary

0.0
0.0 out of 5 stars (based on 0 reviews)
Excellent0%
Very good0%
Average0%
Poor0%
Terrible0%

Latest Reviews

There are no reviews yet. Be the first one to write one.

Latest Tafsir

Latest Books

Scroll to Top