বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; ড. হিশাম আল আওয়াদি লিখিত বই বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মাদ (সাঃ) এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
তিনি ‘উসওয়াতুন হাসানা’। কে তিনি? বিশ্ব মানবতার মহান শিক্ষক, সাইয়্যেদুল মুরসালিন, তিনি মুহাম্মাদ মোস্তফা। তাঁর নবুওয়াতি জীবনের তেইশ বছরই কি কেবল অনুসরণীয় মডেল? পৃথিবীর সেরা মানুষটির জমিনে পা রাখার পর থেকে চল্লিশ বছর পর্যন্ত সময়কাল কি ‘উসওয়াতুন হাসানা’ নয়? নিশ্চয়। প্রিয় নবিজির পুরো তেষট্টি বছরের জীবনই পৃথিবীবাসির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।
বাবা হারানো শিশুদের সামনে কখনো চার বছরের পিতৃহারা শিশু মুহাম্মাদকে দাঁড় করিয়েছেন? বাবা-মা হারানো এতিম শিশুর সাথে কখনো কি পাঁচ বছরের এতিম মুহাম্মাদের বন্ধুত্ব গড়ে দিতে পেরেছেন? আমাদের টিনএজ প্রজন্ম একুশ শতকের আজকের দিনে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, কিশোর মুহাম্মাদ সাড়ে চৌদ্দশ বছর আগে ঠিক এমনই কিছু চ্যালেঞ্জ সামলিয়েছিলেন দারুণভাবে। তিনি তারুণ্যের সঙ্কট মোকাবিলা করেছেন, তারুণ্যের রক্ত ও শক্তি পরিশীলিত সমাজ গঠনে কাজে লাগিয়েছেন।
আজকের তরুণরা যুবক মুহাম্মাদকে পড়ে ইমপ্রেস না-হয়ে পারবেই না! নবুওয়াতের আগেই একজন ক্রিয়াশীল ইফেক্টিভ মানুষ হিসেবে সমাজে জায়গা করে নেওয়া মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ত্রিশের কোঠার টগবগে মানুষগুলোর রোল মডেল না-হয়ে কি পারে? ওহী পাওয়ার পরের মুহাম্মাদ এ-এর যাপিত জীবন, কর্মপদ্ধতি আর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া অবশ্যই অতুলনীয়!
রাসূল সঃ-এর সীরাতকে নানাভাবে লিখা হয়েছে। আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব কুয়েতের প্রফেসর ড. হিশাম আল আওয়াদি তাঁর ‘Muhammad: How He Can Make You Extra-Ordinary’ বইয়ের মাধ্যমে এক নতুন ধারায় রাসূল কে উপস্থাপন করেছেন। বইটির মাধ্যমে শৈশবের নবিজিকে দেখিয়ে শিশুদের করণীয় খুঁজে দিতে পারবেন, বাবা-মা তার সন্তানকে প্রতিপালনের ধারনা নিতে পারবেন, তরুণরা তাদের আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপাত্ত খুঁজে পাবেন। উদ্ভুত সমস্যার সমাধানে রাসূলুল্লাহ -এর স্টাইল যে কেউ নিজের জীবনে প্রয়োগ করার পথরেখা পাবেন।
রাসূল -এর মত নিখুঁত ও স্মার্ট হওয়া হয়ত অনেক কঠিন; এই বই আপনাকে অন্তত তার কাছাকাছি নিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা যোগাবে। অসাধারণ এই বই ‘বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মাদ ‘ নামে অনুবাদ করেছেন প্রিয় ভাই মাসুদ শরীফ। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে উত্তম জাযা দান করুন। বইটি পাঠকদের হাতে তুলে দিতে পেরে গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স অত্যন্ত গর্বিত ও উচ্ছসিত। বইটি আপনার স্মার্টনেস বাড়াতে সামান্যতম সহায়ক হলেও আমাদের প্রচেষ্টা সার্থক হবে।
নিখাদ আত্মোন্নয়নমূলক বই। পশ্চিমে এ ধরণের বই প্রচুর। ওখানে এসব বইয়ের কাটতিও থাকে অনেক। বাংলায় সে তুলনায় এই ধরণের বই আঙুলের কড়িতে গোনা যাবে। পশ্চিমা সমাজের বাইরের মেকআপটা নিলেও, ভেতরের সৌন্দর্যটা নিতে বড় অনীহা আমাদের।
এধরণের বইগুলো শতভাগ প্রাকটিক্যাল বা বাস্তবসম্মত। কীভাবে কী করবেন, কীভাবে নিজের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে উন্নত করবেন তা-ই হাতেকলমে বলা।
পশ্চিমা বইগুলোতে এসব বলা থাকে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন গবেষণা এবং তাদের নিজস্ব আদর্শ ও পদ্ধতির আলোকে। কিন্তু এই বইয়ে পশ্চিমা গবেষণার সাথে অভূতপূর্ব মেলবন্ধন হয়েছে নবি মুহাম্মাদ -এর জীবনের। আমার জানামতে এরকম বই এটাই প্রথম।
নবিজি সঃ নবুওয়াত পেয়েছেন চল্লিশ বছর বয়সে। কিন্তু নবি হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়টা ছিল উনার প্রস্তুতিকাল। এই দীর্ঘসময় জুড়ে আল্লাহ নিজের হাতে গড়েছেন তাকে। আমি অনেককে দেখেছি, দীর্ঘকাল ইসলাম চর্চা করার পরও নবিজির আদলে নিজেকে পুরোপুরি সাজাতে পারছেন না। খাবারে নুন কম হলে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া। বাচ্চাকাচ্চাদের সঙ্গে নির্দয় আচরণ। কাজের লোকের সঙ্গে অকথ্য ব্যবহার। বসের সামনে ব্যক্তিত্বহীন হুজুর হুজুর। অধীনস্থের উপর জোর গলা। খাবারদাবারে নিয়ন্ত্রণ নেই। আচার ব্যবহারে চলনে-বলনে মাধুর্য নেই। আমরা জানি নবিজি ব্যক্তিজীবন থেকে সামাজিক জীবন প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছিলেন পরাকাষ্ঠা। কিন্তু কোথাও বলা হয় না কীভাবে তিনি তা হলেন? দেখানো হয় না আমাদের সময়ে কীভাবে আমরা উনার পথরেখা অনুসরণ করে স্মার্ট হবো।
জীবনে যারা বিশেষ কিছু হতে চান, এই বইটি তাদের জন্য। বইটির পরতে পরতে রাসূল -এর জীবনের এমন সব ঘটনা থাকবে, যেগুলো মানুষকে অনুপ্রেরণা দিবে দারুণভাবে। অবলীলায় তারা তাঁকে গ্রহণ করবেন অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে।
বইটিতে তাঁর নবী হওয়ার আগের জীবন বেশি গুরুত্ব পাবে। আমরা দেখব শিশুকাল থেকে কিভাবে তিনি নিজের ব্যক্তিত্বকে গড়ে তুলেছেন। টিনএজ বয়সের চ্যালেঞ্জগুলো কিভাবে মোকাবিলা করেছেন। তরুণ বয়সেই কিভাবে সমাজে নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
সাধারণত জীবনীগ্রন্থগুলোতে যেভাবে বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করা হয়, এখানে ইচ্ছে করেই সেগুলো সেভাবে বর্ণনা করা হয়নি। এই বইয়ে আমাদের ভাষা অনেকটা ঘরোয়া। অনেকটা সাদাসিধা।
ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে রাসূল এর ব্যাপারে যেসব জীবনী লেখা হয়, সেগুলোর বেশিরভাগে দুটো জিনিস হামেশা পাওয়া যায়; রাসূল -এর ৪০ বছরের পরের জীবন আর পাঠকদের মধ্যে তাঁর ব্যাপারে সম্ভ্রম জাগানো।
কিন্তু এ ধরনের লেখনীতে তরুণ পাঠকেরা নিজেদের কমই খুঁজে পায়। বইগুলোতে তাঁকে এতটাই নিখুঁত পুরুষ হিসেবে তুলে ধরা হয় যে, অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে তাঁকে গ্রহণ করতে বেগ পেতে হয়। তরুণরা অনেক সময়ই তাদের জীবন ঘনিষ্ঠ সংকটের সাথে রাসূল -এর জীবনী মিলিয়ে নিতে পারে না। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন খুব স্পষ্ট করে বলেন, ‘আল্লাহর রাসূলের মাঝে তোমাদের জন্য আছে ভালো ভালো উদাহরণ। (৩৩:২১)
কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, রাসূল -এর সাথে মুসলিমদের সম্পর্ক যতটা কাছের হওয়া উচিত, ততটা হয় না। শিশুরা কখনো কল্পনাও করতে পারে না তাদের প্রিয় রাসূল একসময় তাদের মতোই শিশু ছিলেন। তিনি খেলেছেন, দৌড়াদৌড়ি করেছেন। টিনএজাররা কখনো ভাবেই না যে, তারা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হয়ে দিন পার করছে, রাসূল কে ঠিক এমনই কিছু চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমাদের তরুণরা জানে না কিভাবে তিনি পরিবর্তনের সাথে খাপ খেয়ে নিয়েছেন, কিভাবে তিনি অচলাবস্থার নিরসন করেছেন। এই বইয়ে শিশু মুহাম্মাদ , কৈশোরের মুহাম্মাদ এবং নবুয়তের আগের যুবক মুহাম্মাদ-কে দেখবেন ইনশাআল্লাহ।
নিঃসন্দেহে তিনি আমাদের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার পাত্র। আমরা প্রিয় নেতাকে জীবনের চেয়েও ভালোবাসি। কিন্তু আমরা তাঁকে এমন সম্ভ্রমজাগানিয়া নিখুঁত মানুষ হিসেবে তুলে ধরি যে, আমাদের সময়ে তাঁকে অনুসরণ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা কেন যেন রাসূল কে কঠিন করে উপস্থাপন করতে চাই।
এই বইতে পাঠক তাঁর সম্পর্কে এক নতুন চিত্র পাবেন। তারা দেখবেন কিভাবে তিনি আমাদের মতোই, আমরা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি, সেগুলোর মোকাবিলা করেছেন। সেগুলোর মোকাবিলায় তিনি আমাদের অনুপ্রাণিত করবেন।
পাঠক আরও খেয়াল করবেন যে, এখানে নিজের জীবন উন্নয়নের ধাপগুলোর বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। চিরাচরিত বইগুলোর বর্ণনাভঙ্গীতে অনেক সময় মনে হয়, আমরা কী আর তাঁর মতো হতে পারব? এ ধরনের হীনমন্যতা দূর করে বাস্তব পদক্ষেপ দেখিয়ে দেওয়াই মূল উদ্দেশ্য।
পৃথিবীতে মানুষ যতটা নিখুঁত হতে পারে নিঃসন্দেহে রাসূল তা-ই ছিলেন। কিন্তু এটা সত্য যে, তিনি ছিলেন মানুষ। মানুষ হিসেবে অনেক সংকট ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। এসব ইস্যুতে প্রিয় নবীজী আর আমাদের মাঝে দারুণ কিছু মিল আছে। আমরা সহজাত উপায়েই নবীজীকে অনুসরণ করতে পারি।
তাঁর ব্যাপারে আমি যেসব কাহিনি উল্লেখ করেছি, সেগুলো অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও প্রমাণিত দলিল থেকে নিয়েছি। অন্যান্য কিছু বইয়েরও সাহায্য নিয়েছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আকরাম উমারী। আস-সীরাহ আন-নাবাউইয়াহ আস-সাহীহাহ (নবী মুহাম্মাদ-এর নির্ভরযোগ্য জীবনী), ২য় খণ্ড।
মাহদি রিযকুল্লাহ আহমাদ, আস-সীরাহ আন-নাবাউইয়া ফি দাও’উল-মাসাদির আল-আসলিয়াহ (আদি উৎসের আলোকে ইসলামের নবীর জীবনী), ২য় খণ্ড। আত্ম-উন্নয়নমূলক বিভিন্ন বইয়ের অনেক বিষয় আমি এখানে নিয়ে এসেছি। বিশেষ করে যেগুলো ইসলামের সাথে খাপ খায়, যেগুলো রাসূল সঃ -এর জীবনে পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে আছে সামাজিক বিচারবুদ্ধি, সৃষ্টিশীলতা, পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া, নেতৃত্ব বিকাশের মতো বিষয়গুলো।