Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

আশুরার ফজিলত ও আশুরার রোজার ফজিলত. আশুরার রোজা কয়টি?

আশুরার-ফজিলত-ও-আশুরার-রোজার-ফজিলত.-আশুরার-রোজা-কয়টি

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে আশুরার ফজিলত ও আশুরার রোজার ফজিলত এবং আশুরার রোজা কয়টি।

আশুরার ফজিলত ও আশুরার রোজার ফজিলত

আশুরা শব্দটি আরবি; যার অর্থ দশম। এটি আশারা শব্দমূল থেকে নির্গত; যার অর্থ দশ। আশুরা শব্দটি শুনতেই সাধারণ মানুষের যেন গা শিউরে ওঠে; কারণ আশুরা বলতে তাদের ধারণা কারবালা। আর কারবালা অর্থ নবী সাঃ-এর নাতি ইমাম হুসাইন ইবনে আলী রাঃ এর স্বপরিবারে মর্মান্তিক শাহাদাতের ঘটনা। কিন্তু আসলে আশুরা হচ্ছে চন্দ্র বছরের প্রথম মাস মহররমের দশ তারিখ। আল্লাহ তায়ালা ১২টি মাসের মধ্যে ৪টি মাস যথা: জিলক্বদ, জিলহজ্ব, মুহররম, ও রজবকে হারাম তথা সম্মানিত মাস করেছেন। মুহররম মাসের দশম দিন অর্থাৎ আশুরায়ে মুহাররম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন, যার ফজিলত ও তাৎপর্য অধিক। নিম্নে তার কিছু উল্লেখ করা হলো:

(ক) এ দিনে মূসা আঃ ও বনী ইসরাঈলের নাজাত ও ফেরাউন ও তার জাতির ধ্বংস

আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল মূসা আঃ ও বনী ইসরাঈলকে ফেরাউনের জুলুম থেকে এ দিনে নাজাত দেন এবং ফেরাউন ও তার জাতিকে বাহরে কুলযুম তথা লোহিত সাগরে ডুবিয়ে ধ্বংস করেন।

১. আল্লাহ তায়ালার বাণী:

আর যখন আমি তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিখন্ডিত করেছি, অতঃপর তােমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছি এবং ডুবিয়ে দিয়েছি ফেরাউনের লোকদিগকে তােমাদের চোখের সামনে।

সূরা বাকারা:৫০

২. আল্লাহ তায়ালার বাণী:

আর আমি বনী ইসরাঈলকে পার করে দিয়েছি সাগর। তারপর তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশ্যে। এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, কোন মাবুদ নেই তাঁকে ছাড়া যার উপর ঈমান এনেছে বনি ইসরাঈলরা। বস্তুত: আমিও তারই অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। এখন এ কথা বলছ! অথচ তুমি ইতিপূর্বে নাফরমানি করছিলে! এবং পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। অতএব, আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।

সূরা ইউনুস:৯০-৯২

৩. ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাঃ যখন মদিনায় আগমন করলেন তখন দেখলেন যে, ইহুদিরা আশুরার রোজা পালন করে; তখন তিনি সাঃ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন: তোমরা এ দিন কেন রোজা রাখ? তারা বলল: এটা এক মহান দিবস; এ দিনে আল্লাহ মূসা আঃ ও তার জাতিকে নাজাত দেন এবং ফেরাউন ও তার জাতিকে ডুবিয়ে হালাক-ধ্বংস করেন; তাই মুসা আঃ ও তাঁর জাতি এদিনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে রোজা রাখেন এ জন্য আমরাও রাখি; রাসুলুল্লাহ সঃ বললেন:আমরা মূসা আঃ-এর অনুসরণ করার বেশি হকদার। এরপর তিনি সঃ আশুরার রোজা রাখেন এবং সাহাবীগণকেও রােজা রাখার জন্য নির্দেশ করেন।

বুখারী ২০২৪ ও ৩৩৯৭ মুসলিম ১১৩০ ও ১২৮

(খ) নবী সঃ এ দিনের রোজা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি অনুসন্ধান করতেন

ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে যেভাবে আশুরা ও রমজানের রোজা গুরুত্ব সহকারে অনুসন্ধান করতে দেখেছি অনুরূপ অন্য কোন রোজার ব্যাপারে দেখেনি।

বুখারী হাঃ নং ১৮৬৭ মুসলিম ২/১১৩২

(গ) এ দিনে ছোট বাচ্চারাও রোজা রাখত

রুবাইয়া বিনতে মু’আওবেয (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সঃ আশুরার দিন সকালে আনসারী সাহাবীগণের গ্রামগুলোতে দূত পাঠিলেন। যেন তারা ঘোষণা দেয়: যে ব্যক্তি সকালে কিছু খেয়ে ফেলেছে সে যেন বাকি দিন না খেয়ে পূর্ণ করে। আর যে ব্যক্তি না খেয়ে আছে সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে। তিনি (রুবাইয়া) বলেন: এরপর আমরা নিজেরা রোজা রাখতাম; এবং আমাদের বাচ্চাদেরকেও রোজা রাখাতাম। আর তাদেরকে তুলা দ্বারা বানানো খেলনা দিতাম। যখন তাদের কেউ খানার জন্য কাদত; তখন ইফতার পর্যন্ত ঐ খেলনা দিয়ে রাখতাম। মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে: আমরা বাচ্চাদের জন্য তুলা দ্বারা খেলনা বানাতাম; এবং আমাদের সাথে রাখতাম। যখন তারা খানা চাইত তখন তাদেরকে খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম; যাতে করে তারা তাদের রোজা পূর্ণ করে।

বুখারী হাঃ নং ১৮২৪ মুসলিম হাঃ নং ১৯১৯

(ঘ) এ দিনের রোজা রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে ফরজ ছিল

আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: জাহেলিয়াতের জামানায় কুরাইশরা আশুরার রোজা রাখত এবং রাসুলুল্লাহ সঃ ও রাখতেন। এরপর যখন তিনি মদীনায় আগমন করলেন তখন তিনি আশুরার রোজা রাখেন এবং রাখার জন্য নির্দেশ করেন। অতঃপর যখন রমজানের রোজা ফরজ হলো তখন তিনি সঃ আশুরার রোজা (ফরজ হিসেবে) রাখেননি। (সুন্নত হিসেবে রেখেছেন) এরপর যে চাইত রাখত এবং যে চাইত রাখত না।

বুখারী হাঃ নং ১৮৬৩ মুসলিম হাঃ নং ১৮৯৯

(ঙ) এ রোজা আল্লাহর মাস মহররম মাসে যার স্থান ও মর্যাদা রমজান মাসের পরেই

আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সঃ বলেছেন:রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের রোজা।

মুসলিম ও তিরমিযী হাঃ নং ৬৭১

(চ) এ দিনের রোজা গত এক বছরের পাপকে মিটিয়ে দেয়

আবু কাতাদা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সঃ কে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট আশা করছি যে, তিনি বিগত এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দিবেন।

মুসলিম হাঃ নং ১৯৭৬

আশুরার রোজা কয়টি

দশম তারিখের সাথে নবম তারিখও রোজা রাখা সুন্নত; যাতে করে ইহুদি-খৃষ্টানদের সাথে সদৃশ না হয়। আর ইহাই হলাে সর্বোত্তম যা সাহাবা কেরাম নবী সঃ-এর মৃত্যুর পর করতেন।

১. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সঃ আশুরার রোজা রাখেন; এবং রাখার জন্য নির্দেশ করেন। (পরবর্তীতে) (সাহাবীগণ) বললেন: এ দিনটিকে ইহুদি-খ্রীষ্টানরা বড় সম্মান দান করে। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন: “আল্লাহ চাহে তো যখন আগামী বছর আসবে; তখন আমরা নবম তারিখেও রোজা রাখব। কিন্তু পরের বছর আশুরা আসার পূর্বেই রাসুলুল্লাহ সাঃ মৃত্যুবরণ করেন।

মুসলিম হাঃ নং ১৯১৬

২. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন: যদি বেঁচে থাকি তবে অবশ্যই নবম তারিখেও রোজা রাখব।

মুসলিম হাঃ নং ১৯১৭

৩. ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: তোমরা দশম এর সাথে নবম তারিখও রোজা রাখ।

মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদিসটির সনদ সহীহ-বিশুদ্ধ

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিষয়গুলি সঠিকভাবে বুঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুক। আল্লাহুম্মা আমীন।

Share the Post

Rate the Post

Rating Summary

0.0
0.0 out of 5 stars (based on 0 reviews)
Excellent0%
Very good0%
Average0%
Poor0%
Terrible0%

Latest Reviews

There are no reviews yet. Be the first one to write one.

Related posts

Latest Post

Scroll to Top